এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে পাহাড়ে চলছে বাঙালি ও সেনাবিরোধী কর্মকাণ্ড

0
7

পার্বত্য চট্টগ্রাম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ও পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনাময় এক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত পাহাড় উপত্যকা নিয়ে গঠিত এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় এক-দশমাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলাকে একত্রিত করেছে: রাঙ্গামাটি , খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান। গভীর অরণ্য, হ্রদ এবং জলপ্রপাত সহপাহাড়ী রুক্ষ ভূখণ্ড এটিকে বাংলাদেশের বাকি অংশ থেকে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সুন্দর্য্যময় করেছে। এখানে বসবাস করে বৈচিত্র্যময় ও ভিন্ন ভাষাভাষীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৩ টি জনগোষ্ঠী। যারা ধর্মীয়, জাতিগত ও সংস্কৃতিক দিক দিয়ে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ভিন্ন। দূর্গম পাহাড়ি জনপদে জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান নিম্ন মানের। এবং প্রায় দারিদ্র্য সীমার নিচে। নিম্ম আয়ের জীবনযাপন করে এখানের সকল সম্প্রদায়ের জনগণ। এর মাঝে বিভিন্ন দূর্বলতার সুযোগ খুঁজে নেয় এনজিওগুলো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মিশনারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এনজিও দরিদ্র অসহায় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে তাদের কর্মতৎপরতা পরিচালনা করে। প্রাথমিকভাবে এনজিও-আইএনজিও— স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় এবং চিকিৎসা ও বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে। এই নিমিত্তে তারা রাষ্ট্রের Minorities কিংবা একবারেই Marginalized people ওই বিশেষ এলাকাকে বেছে নেয়। পশ্চিমা মিশনারীরা সারা বিশ্বে আজ Marginalized people জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়, আর্থিক প্রলোভন দেখানোসহ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিভিন্ন সহায়তার নামে এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে রাষ্ট্রের বৃহৎ জাতি ও রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই মিশনারীরা এশিয়ার দেশ হিসেবে এবং ভৌগোলিক কৌশলগত দিকসহ নানাবিধ বিবেচনায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রধান টার্গেট করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশে সীমান্তবর্তী দুইটি দেশ। এই দুইটি দেশে বসবাস রয়েছে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ। এবং এদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্ব মিশনারীদের কাছে অনেক। আপাতত দৃষ্টিতে বলা যায় এই কারণেই এ অঞ্চলেকে ঘিরে দীর্ঘদিন থেকে চলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী অপশক্তি। মিশনারীরা এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্র, বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার কে নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতিকালের বক্তব্য তারই জলন্ত প্রমাণ হতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব এনজিও-আইএনজিও ও দাতাসংস্থা বাঙালি ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হতদরিদ্র সহজসরল মানুষদের বিদ্বেষমূলক মনোভাব পোষণে কাজ করছে, ইতোমধ্যে তাদের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, সনে ইন্টারন্যাশনাল, কমিউনিটি এডভান্সমেন্ট ফোরাম, ব্র্যাক, আশা, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ওফ বাংলাদেশ এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং স্বকীয়তা বিসর্জনের মাধ্যমে এই ধর্মান্তকরণের কার্যক্রম হরহামেশাই পরিচালিত করে আসছে। ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তার নামে মানুষদের মাথায় বড় ধরনের বোঝা ছাপিয়ে একটা সময় কনভার্ট করে। পাহাড়ে এমন প্রমাণ অনেক। দারিদ্র্য মানুষদের ঋণের নামে অতিরিক্ত সুদ আদায়ের মাধ্যমে তাদের সর্বত্র লুট করে একটা পর্যায়ে জনগোষ্ঠীকে কনভার্ট করাই উদ্দেশ্য।

এসব এনজিও, দাতাসংস্থা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি তুলনামূলকভাবে কম সফল হলেও তারা ভিতরগতভাবে পাহাড়িদের মধ্যে বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী মনোভাব তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে। পাহাড়ি যুব সমাজের ছেলেমেয়েদের বাঙালিদের বর্জন করতে বিভিন্ন ধরনের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক তথ্য মগজধোলাই করছে। কিন্তু বান্দরবান জেলার বিশাল এলাকা জুড়ে দুর্গমতার সুযোগে তারা মুরং, চাক, ত্রিপুরা, তংচংগ্যা ও অন্য জাতিগোষ্ঠীর নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের জাতিগত, ধর্মীয় বিদ্বেষ শিখাচ্ছে। Marginalized people মানুষ গুলো একদম সহজসরল। এই মানুষগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো এবং রাষ্ট্র, বাঙালি ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করাই প্রধান উদ্দেশ্য। ”পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিতর্কিত ও বাঙালি ভূমি দখলদার আর রাষ্ট্র পাহাড়ি জাতিসত্তা নির্মূলে আগ্রাসী” এধরণের তথ্য সন্ত্রাস বা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো বিশেষ কোন উদ্দেশ্য থেকে করা হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উস্কে দেওয়ার মত কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে বান্দরবান কয়েকটি এনজিও কার্যক্রম গুটিয়ে দিয়েছিলো সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুরং সম্প্রদায়ের এক পাড়া কারবারী বলেন, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, চাক ও মুরংসহ কেউ বাদ যাচ্ছেনা ধর্মান্তরিতকরণ থেকে। এনজিও’র প্রলোভনের শিকার সচ্ছল আর অসচ্ছল সবাই। এরা পাহাড়ি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা সহায়তা ও উন্নত জীবনের নামে প্রলুব্ধ করে আসছে। বান্দরবান, লামা, আলিকদম, রুমা ও থানচিতে মিশনারী দ্বারা পরিচালিত অনেকগুলো স্কুল ও আশ্রম আছে। এসব স্কুল ও আশ্রমে চলে ধর্মান্তরিতকরণ। কাপ্তাই খ্রিস্টান মিশনারী হাসপাতাল আছে অনেক বছর থেকে। সবাই জানে এরা ভালো চিকিৎসা প্রদান করে। কিন্তু এর আড়ালে এখান থেকে তারা তাদের বিভিন্ন গোপন তৎপরতা পরিচালনা করে। চিকিৎসা সেবার নামে মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করে। এদের আরো অনেক গোপন কার্যক্রম আছে যা অদৃশ্য। বর্তমানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বাঙালি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার রটিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে পাহাড়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে এনজিও গুলো। স্থানীয়রা সম্মিলিতভাবে এদের প্রতিহত না করলে তাদের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম ও পাহাড়িদের ধর্মান্তরিতকরণ কিছুতেই ঠেকানো যাবেনা৷ এজন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। তবে রহস্যজনক বিষয় আমাদের পাহাড়ি নেতারা এই নিয়ে একদম নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ!

স্থানীয়দের সঙ্গে আরো কথা বলে জানা যায়, এসব এনজিও শুধুমাত্র বাঙালি ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড করে থামছে না, তাদের মূল উদ্দেশ্য বাঙালি ও সেনাবাহিনী কে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করে এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মীয়সহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে এ অঞ্চলকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মত অবিকল খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পথে হাঁটবে। এই ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা বাস্তবায়নে উপজাতীয় আঞ্চলিক দলগুলোকে অর্থ, কূটনীতিক সহায়তা ও বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে পাহাড়ে কয়েকশো কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে অনেকগুলো এনজিও। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডেনমার্ক ও নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ‘ডনাক’ নামে একটি প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের শিক্ষা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার বিষয়ক সহায়তার নাম করে পাহাড়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করছে। বাঙ্গালী বিদ্বেষীমূলক প্রচারণাও করছে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ উপজাতিদের খেপিয়ে তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রেরণ করছে। একইসাথে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উপজাতিদের আদিবাসী বানাতে বিশেষ তৎপরতা চালাচ্ছে! শব্দটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে আন্দোলন, সভা-সেমিনার করতে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে প্রায়শ্চই দেখা যায় বিভিন্ন এনজিও কে।

তারচেয়ে দুঃখজনক হলো, বান্দরবান জেলার দুর্গম এলাকার অনেক বৌদ্ধ ধর্মালম্বী পাহাড়িদের আর্থিক প্রলোভন ও ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে ফেলে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির চাক উপজাতিদের অনেকেই আজ খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত। মুরং, ত্রিপুরা, ম্রো-খুমি জনগোষ্ঠীর অনেক মানুষ স্বধর্ম বা প্রকৃতির পূজা বাদ দিয়েই খ্রিস্টধর্মে কনভার্ট হয়েছে। বান্দরবান যেনো খ্রিস্ট ধর্মের উপাসনালয়ে ছেয়ে গেছে। গত আগস্ট ২০১৭ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে গির্জার সংখ্যা ছিল ৩৬৫ টি, তা ২০২০ সালের আগস্টের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৪টিতে। এই পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মান হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব কিভাবে দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আগামী ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হবে। সরেজমিনে বান্দরবানে স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বললে মিশনারীর ধর্মান্তরিতকরণের প্রভাব সম্পর্কে শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে৷ প্রসঙ্গত কারণে আজ আর বেশি খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিতকরণ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের দিকে বিশদ আলোচনায় যাচ্ছিনা।

তবে এসব বন্ধে স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে বিশেষ তৎপর হতে হবে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা ব্যক্তিরা। যথাশীঘ্র এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে ধর্মান্তরিতকরণ, বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধে আশু পদক্ষেপ কাম্য বলে দাবি তাদের।

লেখক: হান্নান সরকার, মানবাধিকার কর্মী

আগের পোস্টমহালছড়ি সেনা জোনের উদ্যোগে নতুন বসতঘর পেলেন একটি উপজাতি পরিবার।
পরের পোস্টপার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বলবৎ করতে তৎপর কেন আঞ্চলিক দলগুলো?

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন