পাহাড়ের মানুষদের একমাত্র উপার্জনের উৎস হিসেবে ধরা হয় জুমচাষকে। পাহাড়ের মানুষদের এই একমাত্র জুম চাষের উপর এবার নজর পড়েছে এক বন রক্ষীর। জুমচাষ করলে গুনতে হচ্ছে টাকা, টাকা না দিলে মামলার হুমকি। ঘটনাটি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ৪ নং করুকপাতা ও ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। এই নিয়ে পাহাড় বার্তা’র বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা।
জানা যায়, জেলার আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরি রেঞ্জের রিজার্ভ এলাকার আওতায় থাকা কুরুকপাতা ইউনিয়ন ও ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ম্রো, ত্রিপুরা, মার্মা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের একমাত্র উপার্জনের উৎস জুমচাষ। উপার্জনের এই উৎসের উপর নজর পড়েছে মো রফিকুল ইসলাম নামের এক বনরক্ষীর। জুমচাষ, বাগান কিংবা বাড়িঘর নির্মাণ করতেই গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তবে এই মোটা অংকের টাকা সবার থেকে সংগ্রহ করেন না তিনি। বেছে বেছে অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বন বিভাগের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন রফিকুল ইসলাম। টাকার পাশাপাশি ঘুষ হিসেবে দেশি মুরগিও নেন তিনি। টাকা আর মুরগী না দিলে মামলার দেওয়ার হুমকি দেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুরুকপাতা ইউনিয়নের প্রত্যক পাড়া থেকে জুমচাষীদের কাছ থেকে ২হাজার টাকা, একটি দেশি মোরগ, বিনি চাউল ও মিষ্টি কুমড়া ঘুষ হিসেবে দিতে বাধ্য করেন। বাগান করলে ১০ হাজার ও বাড়িঘর কিংবা দোকান নির্মাণের জন্য গুনতে হয় ৩০ হাজার টাকা। ৪ নং কুরুকপাতা ও ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিক অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলামের নামে। মানুষকে বাগান করলে মামলার ভয় দেখালেও নিজেই রিজার্ভ এলাকায় জুড়িয়েছেন কয়েকটি জায়গা। বাবু পাড়া বনপুর এলাকায় দুটি জায়গা জুড়ে আনুমানিক ৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন তিনি।
আরো জানা গেছে, চলতি বছরে ১২ ফেব্রুয়ারী পোয়ামুহুরি দড়ি পাড়াতে সাইহং ম্রোয়ের(৬৭) কাছ থেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য দশ হাজার টাকা নেন রফিকুল ইসলাম, অন্যদিকে টাকা দিতে না পারার কারণে একই দিনে মেনতা ম্রো’য়ের নির্মাণাধীন বাড়ি ও দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দুংশিখাল এলাকার বাসিন্দা লাংড়ি ম্রো জানান, গতমাসে রফিকসহ আরও দু’জন বাড়িতে এসে জুমের ব্যবহার করার দা নিয়ে গেছেন। জুমচাষের জন্য টাকার দাবি করেছেন ২০ হাজার টাকা। পরে বিনি চাউল পাঁচ কেজি, একটি মুরগি ও নগদ ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি, তবে জুমের ব্যবহার করার দা এখনো ফেরত দেন নি।
কুরুকপাতা ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ডের ক্রেংলে পাড়ার বাসিন্দা ডনাই ম্রো বলেন, বাড়ি নির্মাণের জন্য ৭ হাজার টাকা, একটি দেশি মুরগি, কুমড়া দিতে হয়েছে।
তুংড়িং পাড়ার বাসিন্দা সাকনাই ম্রো জানান, নতুন বাড়ি তুলেছি বলে রফিককে ৭ হাজার টাকা ও দেশি মুরগী দিতে হয়েছে। না হলে মামলার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
পাতুই পাড়ার বাসিন্দা অংসাই ম্রো বলেন, জুমচাষ করার কারণে রফিককে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। টাকার দেওয়ার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি প্রদর্শন করে রফিক।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বন প্রহরী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা চাইনি, আর মুরগির বিষয়টা তারা উপহার হিসেবে দিয়েছে।
অন্যদিকে ১২ ফেব্রুয়ারী দড়ি পাড়ার টাকা নেওয়ার ও নির্মাণাধীন বাড়িসহ দোকানটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়টির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অফিসের স্টাফরা হাত খরচের জন্য টাকা চেয়েছেন। বাবু পাড়ার বনপুর এলাকায় জায়গা জুড়ে কলা বাগানটিও তার বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে আধাঘন্টা পর যোগাযোগ করতে বলেন। পরে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা | পাহাড় বার্তা