প্রীতি গ্রুপের হাতে এম.এন লারমার মৃত্যু এবং আত্মসমর্পণ।

0

হান্নান সরকার, হিল নিউজ বিডি:

১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস গঠন হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি জেএসএস এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী গঠন হয়। নেতৃত্বে ছিলেন, সংসদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম.এন লারমা)।

লারমা মার্ক্সীয় আদর্শ ধারণ করেছিলেন তার আন্দোলনের জন্য। পরে জিয়াউর রহমান বিচ্ছিন্নতাবাদ ও বৈরী আচরণ ঠেকাতে নতুন বাঙালিদের পাহাড়ি অঞ্চলে অভিবাসিত করলে শান্তিবাহিনীর সংগ্রাম তীব্র হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের লড়াই তীব্রতর হয়ে ওঠে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দলেও সৃষ্টি হয় অন্তর্দন্ধ এবং দলটি ২টি ধারা এম এন রায় গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে এবং ১৯৮২ সালেও মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর তিনি বিপক্ষ দলের আক্রমণে ৮ জনসহ মারা যান খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি থুম নামক স্থানে।

জেএসএস গঠনের পর নেতৃত্ব, চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তৈরি হয় জেএসএস এর মধ্যে। যা পরবর্তীতে ভয়ংকর সংঘর্ষের রূপ নেয়।

১৯৮৩ সালের ১৪ জুন থেকে শান্তিবাহিনীর অভ্যন্তরে যুদ্ধ শুরু হয়। একই বছরের ১০ অক্টোবর এরশাদ সরকার শান্তি বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ১০ নভেম্বর প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন নারায়ণ লারমা। এর মধ্যে শান্তিবাহিনীর ভেতর শুরু হয় উপদলীয় কোন্দল। গড়ে ওঠে প্রীতি বাহিনী। প্রীতি বাহিনীর নেতা হলেন প্রীতি লাল চাকমা। ১৯৮৩ সালের জুনে লারমা বাহিনীর হাতে নিহত হয় প্রীতি বাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষক অমৃতলাল চাকমা। এর প্রতিশোধ হিসেবে ঐ বছরের ১০ নভেম্বরে প্রীতি বাহিনী হত্যা করে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে। তার কয়েকজন সঙ্গীসহ আক্রমণে ৮ জন নিহত হয়।

মানবেন্দ্র লারমা বিরোধী প্রীতি গ্রুপের হাতে নিহত হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে আপন অনুজ সন্তু লারমার কাছে তিনি কিছু গোপন রাজনৈতিক চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি সন্তু লারমাকে প্রিয় আদরের চাকমা নাম ‘তুং’ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। জানা গেছে ৪ টি চিঠি লিখেছেন। কিন্তু কোনো কিছুই জন সংহতি সমিতির মধ্যে কোন্দল সমাধান করতে পারেনি। গোলাম মুর্তজা, রাহমান বিপ্লব।

মানবেন্দ্র লারমার মৃত্যুর পর জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলে আসে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার হাতে। মানবেন্দ্র লারমাকে হত্যার পর প্রীতি চাকমা ভারতের আগরতলায় চলে যান। যার বাহিনীর অনেকেই পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। জেএসএস সন্তুর চুক্তির পর ৪ দফায় মোট ১৯৪৭ জন আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্যে জেএসএস সন্তু ৮১৩টি অস্ত্র জমা দেন। দুই লাখের মত গোলা ছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জেএসএস এর ৭২৪ জন সদস্যকে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি দেয় সরকার। কিন্তু শান্তিবাহিনীর গেরিলা জীবন বইয়ে লেখক গোলাম মুর্তজা ১৯৭৫ সালে শান্তিবাহিনীর ৫০০০ সদস্য থাকার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে ৪ দফায় মোট ১৯৪৭ জন সদস্য কীভাবে হয় তা বোধগম্য নয়। এই থেকে স্পষ্ট শান্তিবাহিনী সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি এবং তাদের সবাই আত্মসমর্পণ করেনি। সন্তু লারমা ২০১৩ সালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর সাংবাদিক শামিমা বিনতে কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, তাদের এখনো কয়েক শতাধিক সশস্ত্র জনবল রয়েছে। যা চুক্তির পরে সৃষ্ট চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ কে মোকাবেলা করতে রাখা হয়েছে।

আগের পোস্টখাগড়াছড়ি দীঘিনালায় উপজাতীয় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে সুমন্ত চাকমা নিহত।
পরের পোস্টনোয়াখালী হাতিয়ায় নদী ভাঙ্গনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে হিন্দু জেলে পল্লী’র অধিবাসীরা

রিপ্লাই দিন

আপনার কমেন্ট লিখুন
আপনার নাম লিখুন