||মোবারক হোসেন, খাগড়াছড়ি||
বিগত তিন বছর অথাৎ ২০১৮ হতে ২০২১ মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ইউপিডিএফ চাপে পড়ে সাংগঠনিক কর্মসূচী করার সক্ষমতা হারালেও চলতি বছরের আগস্ট থেকে তারা পুরোদমে কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নির্বিকার।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ইউপিডিএফ ইতোমধ্যে অস্ত্রশক্তি প্রদর্শন শুরু করে চলছে। চাঁদা আদায়ে শুধু হুমকি-দামকি দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, অস্ত্রশক্তিও প্রদর্শন করছে। এর পাশাপাশি রাস্ট্র ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যে বানোয়াট কুৎসা রটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এর ফলে দেশের স্বাভাবিক ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সন্ত্রাসী তৎপরতা, হত্যা, অপহরণ খুন-গুম ও চাঁদাবাজি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অরাজকতা পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করেছে। HBF-এর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- প্রতিষ্ঠা হওয়ার এই ২৩ বছরে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) উপজাতি-বাঙ্গালি মিলে প্রায় ২,৭৭০ জন মানুষকে হত্যা করেছে; অপহরণ করেছে ২৩৩৯ জনকে ও আহত করেছে ৯৪১ জন মানুষকে।
দাবীকৃত চাঁদার টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মূলত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও অপরাধগুলো সংঘটিত করেছে। যদিও এসব এর অন্যতম কারণ ছিল চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার।
ইউপিডিএফ বাৎসরিক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৬০০ শত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে৷ চাঁদা আদায়ের উৎসগুলো হচ্ছে- অবৈধ কাঠ, বাঁশ, কলা, আদা হলুদ, আম, কাঁঠাল, যানবাহন, মৎস ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
চাঁদাবাজির এসব টাকা দিয়ে ইউপিডিএফ রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, যেমন: দেশের মূল ভূখণ্ড হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আলাদা করার গভীর চক্রান্তের মিশনে ব্যয় করে চলছে, এবং সন্ত্রাসবাদ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি হতে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও দেশ-বিদেশী কূটনীতিক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার কাজের পাশাপাশি প্রথম সারির নেতারা ভোগ বিলাসে ব্যয় করছে।
এসব কিছুর আংশিক লাগাম টেনে ধরতে প্রশাসন বিগত বছরগুলোতে ইউপিডিএফ’কে কৌশলে চাপে রাখার অংশ হিসেবে কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠে নামতে দেননি। কিন্তু ২০২১ আগস্টের প্রথম থেকে ইউপিডিএফ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে পুরোদমে কর্মসূচী পালনে মাঠে নেমেছে, এবং তারা সফলও হয়েছে৷ এক্ষেত্রে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রসারিত করার চাবিকাঠি হচ্ছে, এই কর্মসূচী। অথচ এই কর্মসূচী পালনে তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ হতে বাধাপ্রাপ্ত করা হয়নি। বরং তাদের দমনে উদাসীনতা ও নমনীয়তা লক্ষ করা গেছে। ইউপিডিএফ এর মত দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মদদদাতা ও সহযোগিতাকারী ব্যক্তিদের চালকের আসনে বসানো হয়েছে! এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।