পাহাড় নিয়ে জুমল্যান্ডের ষড়যন্ত্র, অনলাইনে স্বাধীনতার প্রচারণা!

0

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের দিন গত ২৩ এপ্রিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পতাকা অর্ধনমিত রাখার একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেছিল কলম্বোর ইইউ দূতাবাস। সেই ছবির নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘জুমল্যান্ড থেকে গভীর শোক জানাই।

’ এই ‘জুমল্যান্ড’ কোথায়, তা নিয়ে নানা মহলে কৌতূহল দেখা গেছে। আর এটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস মিলেছে।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ‘জুমল্যান্ড’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এক বা একাধিক গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা ‘জুমল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠায় সমর্থন চেয়ে দূতাবাসগুলোতে বার্তাও পাঠিয়েছে। এমনকি ‘জুমল্যান্ড টিভি’ নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট ছাড়াও অনলাইনে এই নামে ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, শান্তিচুক্তির আগে এ ধরনের গোষ্ঠীর বেশ তৎপরতা ছিল। এখনো এ দেশের পার্বত্য এলাকা নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র আছে।

অনেক দেশ ও তাদের বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) তৎপরতাও বেশ সন্দেহজনক। সরকারকে এ বিষয়ে তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
শ্রীলঙ্কায় ইইউ দূতাবাসের ফেসবুক পেজে মন্তব্যের সূত্র ধরে মন্তব্যকারীর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ব্যক্তি এমন একটি গোষ্ঠীর সমর্থক, যারা এ দেশের পার্বত্য অঞ্চলে ‘জুমল্যান্ড’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে তৎপরতা চালাচ্ছে। কথিত জুমল্যান্ডের পতাকা, সরকার কাঠামো ও লোগোও তৈরি করেছে তারা। এ ছাড়া ফেসবুকে প্রকাশিত মানচিত্রে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে আলাদা রঙে প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া তারা এ দেশের পার্বত্য অঞ্চলের সেনাবাহিনীর বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ওই অঞ্চলকে ‘জুমল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনলাইনে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

জানা যায়, ওই গোষ্ঠীর লোকজন বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেলেও নিজেদের কথিত জুমল্যান্ডের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়।

‘জুমল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের কথা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও অবগত। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের কিছু না থাকলেও বিভিন্ন সময় এ ধরনের গোষ্ঠীর ব্যাপারে তথ্য তাঁরাও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রমাণ দেখাতে পারব না; কিন্তু আমাদের কাছেও এ ধরনের গোষ্ঠীর তথ্য আছে। এ দেশের পার্বত্য এলাকা নিয়ে বহু যুগ থেকে ষড়যন্ত্র চলছে। এখানে বহু পক্ষ, বিশেষ করে শক্তিশালী বিদেশিরা জড়িত। পশ্চিমা বিশ্বের যে এনজিওগুলো এখানে কাজ করে, বিশেষ করে খ্রিস্টান মিশনগুলো ধর্মান্তরের কাজ করে। এই কাজগুলো আমাদের অনেক ধরনের সন্দেহের উদ্রেক করে। তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে। পূর্ব তিমুরে, দক্ষিণ সুদানে এ ধরনের মিশনারিজ, এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড পরে অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। সুতরাং এই শঙ্কাগুলো এখানেও অমূলক নয়।’

ভূ-রাজনৈতিক খেলায় বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি এলাকা নিয়ে আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিক নয় বলে মোহাম্মদ আলী শিকদার মনে করেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিচুক্তির আগে ও পরে তাদের নানা ধরনের তৎপরতা আমরা দেখেছি।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের করণীয় প্রসঙ্গে এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, শান্তিচুক্তির যেসব বিষয় বাস্তবায়নের বাকি আছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষোভকে পুঁজি করে এ ধরনের ‘জুমল্যান্ড’ তৎপরতা দেখা যায়। সেখানে জন-অসন্তোষ না থাকলে এই গোষ্ঠীগুলো পাত্তা পাবে না। পাহাড়ে বিবদমান অস্ত্রধারী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে দমন করতে বড় ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More