বাঙ্গালীর পার্বত্য চট্টগ্রাম নাকি উপজাতি সন্ত্রাসীদের জুম্মল্যান্ড, দ্বিতীয় পর্ব- শাহবাজ খাঁন

0

লেখকঃ- শাহবাজ খাঁন- সরকারী তথ্য মতে, আমাদের দেশের অধিকাংশ উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বিশাল জনগোষ্ঠী-ই ইতিমধ্যে খ্রীস্টান হয়ে গেছে। তবে চাকমাদের মধ্যে খ্রীস্টানদের সংখ্যা কম হলেও মারমা, গারো, কুকি, লুসাই, পাংখো, মনিপুরী ও সাঁওতালদের বড় একটি অংশ খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। তদ্রূপ বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন ভারতীয় অংশের অবস্থাও একই। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী উপজাতিরা খ্রীস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ায় ইতিমধ্যে তারা তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্যও রয়েছে যে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ও মিয়ানমারের একাংশ নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশে ভারত-বাংলাদেশের এই পার্বত্যাঞ্চল ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাইতো বিদেশী নানা চক্র পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীদের আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে ওই অঞ্চলকে ‘’জুম্মল্যান্ড নামক খ্রীস্টান রাষ্ট্র’’ গঠনে তৎপর রয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। আর এই চিন্তা-চেতনার দরূন-ই সন্ত্রাসী উপজাতি নেতাদের নির্দেশে তাদের দোসররা পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যে অপবাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্য করতে তৎপর রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যগণ কোন অন্যায় কর্ম না করলেও উপজাতি সন্ত্রাসীরাই সেনাদের পোষাক পড়ে সাধারণ উপজাতি নারীদের (যারা বাঙালিদের সাথে উঠবস করে) ধর্ষণ, গুম, বিনাকারণে হত্যা সহ নানা ধরণের অপকর্ম করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, সেনাবাহিনী সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ ছাড়াও নানা রকম সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে। আর এর সত্যতা পাওয়া যায় কেবল সাধারণ উপজাতিদের সাথে কথা বললেই। তবে একটু আন্দাজ করলেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বাংলাদেশের যেই সেনা সদস্যগণ জাতিসংঘের আন্ডারে থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে ভীনদেশ ও ভীন জাতিদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে শহীদ হওয়ার পাশাপাশি দেশের সুনাম অর্জন করতে পারে। তারা আর যাই হোক, নিজ দেশের শান্তি বিনষ্ট হয় তেমন কোন কাজ কখনোই করতে পারেন না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওরা যা করছে তার কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে আজ থেকে নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই দেশী-বিদেশী কুলাঙ্গারগণ ষড়যন্ত্র করে আসছে। যেমন বেঈমান ইংরেজ’রা ১৮৬০ সালে পার্বত্য অঞ্চলকে দখল করে ২১ বছর শাষন ও শোষণ করার পরে ১৮৮১ সালে পুরো পার্বত্য অঞ্চলকে তিনটি সার্কেলে ভাগ করে তিন সার্কেলে তিনজন রাজাকে নিয়োগ দেন। যাদের মধ্যে ছিলেন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়, বোমাং রাজা অং শৈ প্রু চৌধুরী এবং মানিকছড়ির মং রাজা মং প্রু চাঁই চৌধুরী বা (মং প্রু সাইন )। তবে এদের মধ্যে মানিকছড়ির মং রাজা ব্যতীত বাকি দুইজন-ই ছিলেন প্রখ্যাত রাজাকার, অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকাশ্য বিরোধীতাকারী যুদ্ধাপরাধী। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়’তো মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত-ই পাকিস্তানে ছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী, হাই-কমিশনার সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পূর্বে করে যাওয়া অসিয়ত অনুযায়ী তার পুত্র দেশদ্রোহী দেবাশিষ রায় তার পিতা ত্রিদিব রায়কে বাংলার জমিন পার্বত্য অঞ্চলে সমাহিত করতে চায়। কিন্তু দেশপ্রেমিক বাঙালিদের প্রতিবাদের মুখে তা তারা করতে পারেন নি। আর তাইতো শেষ পর্যন্ত ত্রিদিব রায়কে পাকিস্তানেই সমাহিত করতে বাধ্য হয়।
পার্বত্য অঞ্চলের রাজ বংশের ইতিহাসটি মুসলিম মোগল রাজ পরিবারের ইতিহাস হলেও কালের বিবর্তনে তা মুসলিম থেকে হিন্দু আবার হিন্দু থেকে বৌদ্ধ চাকমাদের রাজ বংশের ইতিহাসে রূপ নিয়ে এখনও বিদ্যমান আছে। আর এই বিষয়ে ভালভাবে জানতে গবেষক জামাল উদ্দিনের “পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস” বইটি পড়লে অনেক অজানা সত্যই জানা যাবে। এই বইটির মাধ্যমে স্পষ্টত প্রমাণিত যে, চাকমা রাজাগণ পার্বত্য অঞ্চলের রাজ সভ্যতাটি অনেকটা ছিনতাই করে তাদের নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে। চোরের মায়ের বড় গলা কথাটির মতোই চাকমা রাজ বংশের লোকগণ-ও ফুটানি করে বলে যে, তারা রাজ বংশীয় লোক। তারা পার্বত্য অঞ্চলের হ্যান-ত্যান। তো তাদের রাজ বংশের ইতিহাস খুজতে গিয়ে একটু অবাক-ই হলাম এবং লক্ষ্য করলাম যে, তারা জন্মলগ্ন থেকেই অকৃতজ্ঞ ও বেঈমান। এমনকি তাদের শরীরে কখনোই কোন রাজ বংশীয় রক্ত-ও প্রবাহিত হয়নি। তাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস খুজতে যাওয়ার আগে মূল ঘটনাটি আগে জানা প্রয়োজন। যেমনঃ- ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত বর্ষের সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার ধাওয়া খেয়ে শাহ সুজা তার অনুগত ফতেহ খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লাহ খাঁ, শের দৌলত খাঁ সহ ১৮ জন সেনাপতি এবং তাদের অধীনে বিপুল সংখ্যক মোগল যোদ্ধাদের নিয়ে চট্টগ্রাম হয়ে নাফ নদীর তীরে পৌঁছান। অতঃপর বেঈমান আরাকান রাজের শর্ত মোতাবেক সকল যোদ্ধাদের সেখানেই বিদায় জানিয়ে মাত্র ২০০ জন দেহরক্ষীকে নিয়ে নাফ নদী পারি দিয়ে আরাকানের রাজধানী ম্রোহং-এ উপস্থিত হন শাহ সুজা। কিন্তু আরাকান রাজ বিশ্বাসঘাতকতা করলে ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে আত্মীয় স্বজন সহ অত্যন্ত করুণভাবে নিহত হন শাহ সুজা। এই অবস্থায় নাফ নদীর এপারে থেকে যাওয়া মোগল সেনাপতিগণ তাদের বাহিনী নিয়ে আর কোথাও না গিয়ে বরং অত্র অঞ্চলেই বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তাদের সামনে ছিলো বেঈমান আরাকান বাহিনী আর পেছনে ছিলো মীর জুমলার বাহিনী।
চলবে…

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More