বাঙ্গালীর পার্বত্য চট্টগ্রাম নাকি উপজাতি সন্ত্রাসীদের জুম্মল্যান্ড, তৃতীয় পর্ব- শাহবাজ খাঁন

0

লেখকঃ- শাহবাজ খাঁন-ভীত মোগল সেনাপতিগণ তাদের অনুগত সৈন্যদের নিয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্গম অঞ্চলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রথম দুর্গ প্রতিষ্ঠা করলেন এবং তারা সেই স্থানের নামকরণ করলেন আলীকদম। (আলীকদম নামটি তারা নবীপাক (সাঃ) এর জামাতা হযরত আলী নামানুসারে রাখলেন। এর কারণ তারা সবাই ছিলো ইরানি বংশোদ্ভূত শিয়া সম্প্রদায়ের লোক।) আলীকদমে দুর্গ প্রতিষ্ঠার পরে নারী সঙ্গীবিহীন মোগলরা সে সময় অত্র অঞ্চলে উদ্ভাস্তু হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপজাতিয় রমণীদের বিয়ে করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হতে থাকেন এবং এদের মধ্য হতে জুমিয়া, মগ, চাকমা সহ অন্যান্যদের জুম চাষাবাদে নিয়োজিত করে আলীকদমে প্রতিষ্ঠা করেন জুমিয়া জমিদারী। (চাষাবাদে নিয়োজিত উপজাতিদের সবাই এইসব মোগল জমিদারদেরকে রাজা বলে মান্য করতো।) জমিদার বা রাজাদের ব্যবহৃত সিলমোহরে উল্লেখিত হিজরী সন পর্যালোচনা করে তৎকালীন যেইসব শাষকদের নাম পাওয়া যায়। তারা হলোঃ- রাজা ফতেহ খাঁ, রানী সোনাবি, রাজা শের জব্বার খাঁ, রাজা নুরুল্লাহ খাঁ, রাজা চন্দন খাঁ এবং রাজা জালাল খাঁ। এই রাজাদের প্রত্যেকেই ছিলেন শাহ সুজার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মাধ্যক্ষ বা সেনাপতি।
কিন্তু ১৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দে নানা উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে এই জমিদারি প্রথা আলীকদম থেকে সরে আসে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। আর এখানে যথাক্রমে রাজত্ব করেনঃ-
১। রাজা শেরমস্ত খাঁ (১৭৩৭-১৭৫৩ খ্রি.),
২। রাজা শুকদেব (১৭৫৩-১৭৫৮ খ্রি.),
৩। রাজা শের জব্বার খাঁ (১৭৫৮-১৭৬৫ খ্রি.),
৪। রাজা শের দৌলত খাঁ (১৭৬৫-১৭৮২ খ্রি.),
৫। রাজা জানবক্স খাঁ (১৭৮২-১৮০০ খ্রি.),
৬। রাজা তব্বার খাঁ (১৮০০-১৮০১ খ্রি.),
৭। রাজা জব্বর খাঁ (১৮০১-১৮১২ খ্রি.),
৮। রাজা ধরম বক্স খাঁ (১৮১২-১৮৩২ খ্রি.) এবং
৯। রাণী কালিন্দী (১৮৪৪-১৮৭৩ খ্রি.)।
এইসব মোগল শাষক ও তাদের বংশানুক্রমিক রাজা বা জমিদারদের সাথে উপজাতিদের জমিদার-প্রজা সম্পর্ক ছাড়া আর অন্য কোন সম্পর্ক-ই ছিলো না। এইসব রাজাদের প্রজাগণের মধ্যে ছিলো চাকমা, তঞ্চ্যাঙ্গা ও কুকি সম্প্রদায়ের লোকেরা। তবে বর্তমান চাকমা রাজবংশের গোড়াপত্তন হয়েছিল রাজা ধরম বক্স খাঁ এর মৃত্যুর পরে তার প্রথম স্ত্রী (চাকমা বংশোদ্ভূত) রাণী কালিন্দীর হাত ধরে। রাণী কালিন্দী তার স্বামীর মৃত্যুর পরে ১২ বৎসর মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে নানা চড়াই-উতরাই পার করে শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের সহযোগীতা নিয়ে নিজের জমিদারি প্রথা চালু করে। আর তার মৃত্যুর পরেই তার কন্যা মেনকার সন্তান হরিশ্চন্দ্র (১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে) রাজা হন। অতঃপর এই হরিশ্চন্দ্র থেকেই বর্তমান চাকমা রাজাদের রাজবংশীয় ইতিহাস শুরু হয়। রাজা হরিশ্চন্দ্র ক্ষমতা গ্রহণ করতেই রাজপরিবার পুনরায় মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হয়। এরপর আদালতের রায়ে রাজা হরিশ্চন্দ্র রাজ পরিবারের অন্য সদস্য হোসেন খাঁ এর নিকট ২২ তালুকের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হলে তিনি রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ত্যাগ করে তার জমিদারিকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তর করেন। রাঙ্গামাটিতে রাজত্ব করা রাজাগণ হলেনঃ-
১। হরিশ্চন্দ্র রায় (১৮৭৩-১৮৮৫ খ্রি.),
২। রাজা ভুবন মোহন রায় (১৮৯৭-১৯৩৩ খ্রি.),
৩। রাজা নলিনাক্ষ রায় (১৯৩৫-১৯৫১ খ্রি.),
৪। রাজা ত্রিদিব রায় (১৯৫৩-১৯৭১ খ্রি.),
৫। রাজা কুমার সুমিত রায় (১৯৭২-১৯৭৭ খ্রি.) এবং
৬। রাজা দেবাশীষ রায় (১৯৭৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত)।
বর্তমানের এই চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ও মন্ত্রীর মর্যাদায় আসীন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান (এক সময়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন শান্তিবাহিনীর প্রধাণ) সন্তু লারমা সহ তাদের দোসর’রা আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যেইহারে দেশবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তা এইভাবে চলতে থাকলে হয়তো সেইদিন আর বেশী দুরে নয়, যখন বাঙালিদেরকে পার্বত্য অঞ্চলে যেতে ভিসা নিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ পার্বত্য অঞ্চল তখন আর বাংলাদেশের অংশ থাকবে না, পার্বত্য অঞ্চল হবে “জুম্মল্যান্ড” নামক স্বাধীন একটি রাষ্ট্র। আর তারা (উপজাতি সন্ত্রাসীরা) তাদের কাজটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সহযোগীতা নিয়ে মোটামুটি এগিয়ে-ও নিয়েছে। অথচ আমাদের সরকার আর আমরা এখনও চুপ করে বসে মনে মনে বিলাপ কাটছি “আরে দেখি না শ্যালায় কি করে”…!!!
চলবে…

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More