পার্বত্য বাংগালীদের দমিয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র অবান্তর নয়।

0



অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে যখন কেউ পার্বত্য সংগ্রামে যুক্ত হবে তখনই একটি গোষ্ঠী বা কিছু স্বজাতি পেছনে আটার মত লেগে থাকবে। একদিকে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মত্যাগ স্বীকার করা অন্যদিকে স্বজাতি দালালদের বাধা টেনেহিঁচড়ে দমিয়ে দেওয়া। তন্মধ্যে প্রশাসন তো প্রতিটি কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা প্রশাসনের যেখানে রুখে দাঁড়ানো উচিত সেখানে প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের রুখে দিতে ব্যস্ত। এ হচ্ছে পার্বত্য প্রশাসনের চরিত্র। এ অঞ্চলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে কারা নিয়েছে তা কারোরই অজানা নয়, মোদ্দা কথা হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা আড়াল করে নিজেদের ফায়দা লুটে নেওয়া, দেশ যাক রসাতলে! তাতে কি? সন্ত্রাসীদের অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি ও খুন-গুম, ধর্ষণ নির্যাতন, নিপিড়ন এখানকার মানুষ আজ নিরুপায় হয়ে একপ্রকার নিজেদের ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছে৷ কখন কার মৃত্যু কিভাবে হয় কেউ জানে না। অদৃশ্য শক্তির ইশারায় সন্ত্রাসীদের নির্বিঘ্নে সাংগঠনিক তৎপরতা পার্বত্যবাসীর নাভিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ছোট আয়তনের একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া অদৃশ্য শক্তির ইন্ধন থাকার বিষয়টি অনুমেয় করাটা অবান্তর নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নীল নকশা বাস্তবায়নকারীদের সংখ্যাও কম নয়। উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা লালন ধারণ রুখে দেওয়া রাষ্ট্রের বাংগালী জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম দৃষ্টান্ত। দুঃখজনক যে,  এ বাংগালী জনগোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র অনেকে আঁচ করতে পারেনা! অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখানকার বাংগালীরা কোনপ্রকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা রাষ্ট্র থেকে ভোগ করেণা। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পার্বত্যে বাংগালীদের মর্যাদা। আবার পার্বত্য বাংগালীদের মূল পরিচয়ে জাতি হিসেবে তারা বাংগালীও না, পার্বত্য চুক্তির ধারা মোতাবেক বাংগালীদের পরিচয় অউপজাতি। বৈষম্যমূলক পদক্ষেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন পার্বত্য বাংগালীরা সৃষ্টি করে তখন বাংগালীদের উপর নির্যাতন, নিপিড়ন অব্যাহত থাকে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ যখন অপ্রতিরোধ্য ভাবে সংগ্রাম সৃষ্টি করে ঠিক তখনই তাকে বিভিন্নভাবে দমিয়ে দেওয়া হয়! একদিক থেকে নয় ত্রিমুখী চক্রান্ত হয় প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে। তখনই সকল ইচ্ছাশক্তির বিনাশ ঘটে। অনেকেই বাংগালী দমিয়ে রাখার কৌশলকে অবান্তর বলেও মনে করেন! পার্বত্য নিয়ে যেটা বারবার প্রত্যক্ষ করেছি সেটা হলো এখানকার সবকিছু সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক মাঠ ও প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহ সবকিছু সন্ত্রাসীদের মনরক্ষার জন্য ব্যস্ত। মনে হচ্ছে প্রশাসনের মূল কাজ সন্ত্রাসীদের খুশি রাখা! প্রশাসন এমন দৃষ্টান্ত দেখায় মনে হচ্ছে যে এখানকার বাংগালীরা কোন মানুষই নয়। সাধারণ মানুষের কথা শুনবার মত প্রশাসনের সে সময় নেই! তোষামোদ এতটা যে তীব্র হয়েছে সবকিছু বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য। চাটুকারিতা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে চেয়ার রক্ষা আর ভালোভাবে পকেট ভরার জন্য উপযুক্ত অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম৷ যত কালো টাকা সাদা টাকা সব এখানে ছড়াছড়ি৷ গত আগস্টে Sa Tv পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশ চারা সৃজনের ২৫ কোটি টাকার একটি ৫

 বছরের প্রকল্পের সংবাদ প্রচার করে। সংবাদে জানানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ দিকে কিন্তু সরেজমিনে প্রকল্প গুলো পরিদর্শনে গিয়ে ২৫ কোটি টাকার বাঁশের চারা সৃজনের কোন বাস্তবতা পাওয়া যায়নি! শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নয়, পাহাড়ের সব কাঠামোতে এ হাল। যদিও এখানকার প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাদের এমন কারসাজি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা অবগত নয়। যার কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক বিষয় চেপে যাওয়া হয়। প্রশাসন কর্তৃক পার্বত্য বাংগালীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানী প্রতিবেদের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে গত ২০১৮ খ্রিঃ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনকে বাংগালীদের জীবনমান প্রসারিত করার নির্দেশ ও বাংগালী সংগঠন গুলোকে সহযোগিতা করা সহ বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হয় এক চিঠিতে। যদিও খাগড়াছড়ি প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশ মানছে বলে প্রতিয়মান হয়না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে চিঠির অনুলিপি দিয়ে দায় ছেড়েছেন। জেলা পরিষদ কি করেছে তা জানার এ অঞ্চলের কারো বাবার ক্ষমতা নেই। পার্বত্য বাংগালী নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে অনেক কিছুই জড়িত। বাংগালীদের বারবার দমিয়ে রাখার গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। সে প্রেক্ষিতে পার্বত্য বাংগালী আন্দোলনে বাধা দেওয়া এবং বাংগালীদের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা পক্ষান্তরে তারই জলন্ত উদাহরণ। কেউ বিশ্বাস করবে কি করবে না, সেটা নিতান্ত তার বিষয়। কিন্তু পার্বত্য প্রেক্ষাপটে এটাই চরম বাস্তবতা।

লেখক: জুনায়েদ মারুফ, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক এবং ব্লগার পার্বত্য চট্টগ্রাম

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More