||হিল ব্লগার||
১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাংগালীদের সরকার রাষ্ট্রের ভূখণ্ড অথাৎ রাষ্ট্রের আয়তনের এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংখ্যা বসবাস কম হওয়াতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল হতে বাংগালীদের এনে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাস ভূমিতে নিয়ে হস্তান্তরিত করে। এ অঞ্চলে বৃটিশদের দাবার গুঁটি হিসেবে ব্যবহারিত হওয়া উপজাতীয়দের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদী উদ্বুদ্ধে থাকা তথাকথিত শান্তিবাহিনী বাংগালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে৷নির্বিচারে বাংগালীদের উপর গুলিবর্ষণ, নির্মিত ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বাংগালীদের উৎখাতের চেষ্টার অংশ হিসেবে গণহত্যা সংগঠিত করে। সদ্য রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে গঠিত হয় শান্তিবাহিনী!যে শান্তিবাহিনী ১৯৯৭ পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করে। চুক্তির পরেও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পার্বত্যে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুমে জড়িত থাকে ধারাবাহিকভাবে। তৎকালীন বাংগালীদের টিকে থাকা ছিলো অকল্পনীয়।রাষ্ট্রীয় বাহিনী বাংগালীদের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়।বাংগালীরা তখন নিজেদের রক্ষার তাগিদে সবাই একাট্টা হয়ে পার্বত্য গণ পরিষদ গঠন করে। এ পার্বত্য গণ পরিষদ পার্বত্য বাংগালীদের প্রথম সংগঠন৷ মরহুম জালাল উদ্দীন চৌধুরী আলমগীর গণ পরিষদের প্রধান উদ্যোগতা।তিনি বাংগালী আন্দোলনের প্রথম প্রবর্তক।পার্বত্য গণ পরিষদের কাপ্তাইয়ের হারিছ চেয়ারম্যান, কাউখালীর রুহুল আমিন চেয়ারম্যান, কবি মাহমুদ হাসান নিজামীরা কাজ করেছেন দীর্ঘসময়। গণ পরিষদ শুধু বাংগালীর জন্য নয়, একসময় সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক উপজাতীয় নেতাও যোগদান করেছে গণ পরিষদে৷ বাঘাইছড়ি সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এল থাঙ্গা পাংখোয়া গণ পরিষদে যোগ দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের অত্যাচার ও বাংগালীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন এল থাঙ্গা পাংখোয়া।যার পরিণতিতে সন্ত্রাসীরা এল থাঙ্গা পাংখোয়াকে হত্যা করে।পার্বত্য গণ পরিষদ অনেক সুসংগঠিত সংগঠন ছিলো, এ অঞ্চলের নির্যাতিত সকল সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের হাতিয়ার।কোন একটি অদৃশ্য শক্তি গণ পরিষদকে ভেঙে চুরমার করে দেন সু-কৌশলে।এর পরে একেরপর এক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে।এসকল সংগঠন বেশিদিন রাজপথ দখলে রাখতে পারেনি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংগঠন গুলোর সম্পৃক্ততা একদম ছিলনা বললে চলে। যে যার যার মত সংগঠন গঠন করে।আবার অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ভেঙে দিয়েছে৷ এভাবে দুই যুগ-এর বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে৷কোন একটি সংগঠন আন্দোলনে দানাবাঁধলে সে সংগঠনকে ভেঙে দেওয়া হয়!আবার কোথায় থেকে পাতি নেতার আর্বিরভাব হয় সেই এসে নতুন সংগঠন সৃষ্টি করে। এখন আর বাংগালীদের সাইন বোর্ড নিয়ে পরিচালিত এসব সংগঠন জাতির অধিকার নিয়ে আন্দোলন হয় না।আন্দোলন হয় কোন একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। তন্মধ্যে এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে লেগে থাকা তো স্বাভাবিক বিষয়।কূটকৌশলে বাংগালী ভিত্তিক সংগঠন ফাটল ধরাতে তৎপর রয়েছে একটি অদৃশ্য শক্তি। বারবার যখন সন্ত্রাসীরা হত্যা, অপহরণের মাধ্যমে ও চাঁদা উত্তোলন করে বাংগালীদের জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয় তখন বাংগালী সংগঠন গুলোর ভূমিকা থাকে রহস্যজনক!এক সংগঠন আরেক সংগঠনের বিরোধিতা করে কর্মসূচী বানচাল করার হীন্য চেষ্টা করে। সংগঠন গুলোতে ফাটল ধরাতে দাবার গুঁটির মত কতিপয় বাংগালী নেতা ও পাতি নেতাদের ব্যবহার করা হয়। পার্বত্য চুক্তির পরেও যখন সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি তখন আবার বাংগালী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে বাংগালী সংগঠন এযাবৎ নিজেদের অধিকার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য যুগোপযোগী কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনের ফলে৷আর যোগ্য কোন নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে দেয়নি বাংগালী সংগঠনে৷ বাংগালীদের অধিকারের দোহাই দিয়ে গঠন হওয়া সংগঠনের কর্তারা নিজেদের পকেটভারী করতে ব্যস্ত। যত বর্জিত নেতা ও পাতি নেতা আছে তাদের আগমণ সংগঠনে। জাতীয় পর্যায়ের আওয়ামীলীগ-বিএনপির’র ভালো পদধারী কোন নেতার সম্পৃক্ততা নেই সংগঠনে৷ যারা জাতীয় রাজনৈতিক দলে জায়গা পায়নি পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত তারাই বাংগালী সংগঠনের কর্ণাধার!এরা আজ পর্যন্ত একটি সফল আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারিনি!আর জাতীয় রাজনৈতিক দলের কিছু প্রভাবশালী নেতাও চাটুকারিতায় ব্যস্ত! হাজার বাংগালী হত্যাকান্ডের মধ্যে একটি হত্যার বিচারের মুখামুখিও করতে পারেনি সন্ত্রাসীদের।ন্যায় দাবি আদায়েও আপোষ!কর্মসূচী ডেকে আবার কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে।এসমস্ত কারণে পার্বত্য বাংগালীরা সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷এখন পার্বত্য বাংগালীরা মনে করে বাংগালী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই৷ বাংগালীর সাইন বোর্ড বিক্রি করে এজেন্ডা বাস্তবায়নও নিজেদের পকেটভারী মূল কাজ৷ সংগঠন গুলোর তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার কমিটির সবাইকে নিয়েও ২ হাজার নেতাকর্মী হবে না!ত্যাগী বাংগালী নেতাদের বাদ দিয়ে সংগঠন কতটুকু জাতির অধিকার আদায় হবে?
ব্লগার