পাহাড় ভ্রমণে এসে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হতে হয় পর্যটকদের,স্বাধীন দেশের মানুষ পাহাড়ে যেতে পারবেনা কেন?

0

||হোসাইন মোবারক||

পার্বত্য চট্টগ্রামে গমনাগমন করার সময় দেশের ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ বা পর্যটকেরা নানান প্রকার চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হয়।স্বাধীন দেশের মানুষ নাকী পাহাড়ে যেতে পারবে না। বাহ! মনে হচ্ছে সব মগের মুল্লুক! আমরা যদি পাহাড়ে যেতে না পারি তাহলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আসবে কেন বা থাকবে কেন?

এই দেশের সুশীল, জ্ঞানপাপী, প্রগতিশীল ও রাম-বামরা কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেনা! তাদের সবসময় একটা বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়, সেটা হলো পাহাড়ে কেন বাংগালী ও সেনাবাহিনী থাকে? কিন্তু তারা একটিবার এটা বলেনা চুক্তির পরেও পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী কেন?

বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বেঘাত ঘটাচ্ছে এবং উক্ত অঞ্চলের মানুষের রক্ত চুষে নেয়াসহ অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, খুন-গুম ও অপহরণ ও ধর্ষণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করে তুলছে৷ তাদের অপকর্মের ব্যাপারে বর্ণিত শ্রেণী সর্বদা নীরব! মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। তাদের সমস্যা শুধু পাহাড়ে বাংগালী ও সেনা! পাহাড়ে পর্যটন শিল্প বিকাশে যখন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় তখন ভূমি দখলের মত মিথ্যা অভিযোগ করা হয়! প্রকৃত ঘটনা প্রবাহ না জেনে একতরফাভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম অবস্থান করে নির্লজ্জ মিথ্যাচার রটিয়ে থাকে।

বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি বিশেষ অঞ্চল। এ অঞ্চলকে পর্যটন শিল্প বিকাশের কাজে লাগাতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দরবারে পর্যটন শিল্পের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। আমরা সারাবিশ্বে দেখি থাকি পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাষ্ট্র-প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করে থাকে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের জন্য যথাযথভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়না এদের মিথ্যাচারের কারণে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে তৎপরতা বৃদ্ধি করলে তখন এ মহলটি থেকে কাল্পনিক অভিযোগ করে বলে থাকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে কারাগারে রুপান্তরিত করে রেখেছে। তারা এধরণের মিথ্যাচার প্রোপাগান্ডা করে! অথচ পাহাড় ভ্রমণ করতে এসে এদেশের ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ নানান প্রকার চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হতে হয় যথেষ্ট নিরাপত্তা না থাকার কারণে শুধু। পার্বত্য চুক্তির ২৩ বছরের পদার্পণ করলেও অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্যমান! চুক্তির ৩ বছরের মাথায় ২০০১ সালে ৩ জন বিদেশী পর্যটককে ইউপিডিএফ নানিয়ারচর হতে অপহরণ করে নিয়ে যায় মুক্তিপণ আদায়ের জন্য। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারকে ভীষণভাবে চাপ প্রয়োগ করে৷ বাংলাদেশ ভ্রমণকে তৎকালীন বিপদজনক হিসেবে উল্লেখ করে। তৎসময় ৩ বিদেশী পর্যটক থেকে ইউপিডিএফ ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করে! এর পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিদেশীসহ এদেশের অধিকাংশ মানুষ অনিরাপদ মনে করে।

প্রতিবছর পাহাড়ে পর্যটকদের উপর হামলা হয়, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি আলুটিলা ইতোপূর্বেই অগণিত বার হামলা হয়েছে। পর্যটকরা এসে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক নাজেহাল হতে হয়। পর্যটক যুগলকে অর্ধ নগ্ন করে টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেওয়াসহ সামাজিকভাবে অপদস্ত করা হয়৷ নানান কৌশলে পর্যটকদের থেকে চাঁদাবাজি করা হয়। বিশ্বের অন্য কোথাও এইভাবে স্বাধীন একটি দেশের ভূখণ্ডে পর্যটককে হয়রানি করা হয় কিনা তা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে জানা নেই৷ আধুনিক সভ্যতার যুগে এসেও এদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে! পাহাড়ে বাংগালী পর্যটক আগমণ যদি সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসবাদ লালনে বাধা হয়ে থাকে তাহলে সন্ত্রাসীদের উচিত পাহাড়ে বন্দী হয়ে থাকা। কি দরকার তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম যাওয়া?

আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড, আগ্রাবাদ, কালুরঘাট এবং ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় জেএসএস-ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামসহ পাহাড়ি শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কলকারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের থেকে চাঁদাবাজি করে থাকে। প্রায়শই দেখা যায় উপরোক্ত এলাকাগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ-জেএসএস একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করতে। উক্ত এলাকার থানা গুলোতে খোঁজ নিলে তারই প্রমাণ পাওয়া যাবে। এই উপজাতি সন্ত্রাসীরা যদি সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস বা থাকতে পারে, তাহলে সমতলের মানুষ কেন পাহাড়ে যেতে পারবে না? কেন পাহাড়ে ভ্রমণ করতে গেলে চাঁদা দিতে হবে? কেন অপহরণ ও হামলা মামলার শিকার হতে হবে?

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। এদেশে সব নাগরিকদের সংবিধান অনুযায়ী সমান অধিকার। জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে বাংলাদেশী। পাহাড়ের মানুষ সারাদেশে আসতে পারলে সারাদেশের মানুষও পাহাড়ে আসতে পারবে৷ এই নিয়ে যারা বাধা সৃষ্টি করে এবং পর্যটকদের থেকে চাঁদাবাজি করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More