২১ লাখ টাকা নিয়ে উধাও উপজাতি চাকমা বিজিবি সদস্য!!

1

||হামিদুর রহমান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি||

হবিগঞ্জ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এক উপজাতি চাকমা বিজিবি সদস্য। উধাও বিজিবি সদস্য বরুণ বিকাশ চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার দুরপর্য্যানাল এলাকার বাসিন্দা অনাদি রঞ্জন চাকমার ছেলে। সে শনিবার হতে পলাতক। পালানোর আগে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ এর মাধ্যমে এসব টাকা নিজের বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রীসহ স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ হতে গতকাল ৪ এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ হবিগঞ্জ সদর থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ৫৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামিউন্নবী চৌধুরী জানান, উপজাতি চাকমা বিজিবি সদস্য বরুণ বিকাশ চাকমা হবিগঞ্জ জেলার ধুলিয়াখাল ক্যাম্পের ক্যান্টিনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সাধারণত প্রতিদিন ২-৩ লাখের বেশি লেনদেন হয় না। যখন বেতন হয় তখন লেনদেন একটু বেশি হয়। কারণ তখন অনেকেই বাড়িতে টাকা পাঠান। বিকাশ এজেন্টকে বলা ছিল তারা যেন ৩ লাখের বেশি প্রতিদিন লেনদেন না করেন। কিন্তু এরপরও একদিনে ১৫ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন।

তিনি বলেন, সব টাকা নগদ নেয়নি। ১৫ লাখ টাকা তার বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রীসহ স্বজনদের বিকাশ একাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরপরই পালিয়ে গেছে। তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার পর তারাও মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে। তবে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে দায়িত্বরত বিজিবির সঙ্গে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা খুঁজছেন। আশা করছি সে অবশ্যই ধরা পড়বে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় বিজিবি সদস্য মোমিনুল বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। বিকাশ এজেন্টকেও বলা হয়েছে তারা যেন মামলা দায়ের করেন।

বিকাশ এজেন্ট স্কাইডেস্ক কমিউনিকেশনের সত্ত্বাধিকারী সৈয়দ ইশতিয়াক হাসান বলেন, বরুণ বিকাশ চাকমা নামে বিজিবির ওই সৈনিক তাদের সঙ্গে প্রায় ৬-৭ মাস যাবত ব্যবসায়িক লেনদেন করে আসছিলেন। তিনি বিকাশের মাধ্যমে তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা নিয়ে বিজিবির বিভিন্ন কাজকর্ম করে আসছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিলের শুরুতে তিনি তাদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নেন। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিজিবির ক্যাম্পে গিয়েও তার কোনো সন্ধান পাননি তারা।

জানা গেছে, বরুণ বিকাশ চাকমা নামে বিজিবির ওই সৈনিক সদর উপজেলার ধুলিয়াখালে ৫৫ বিজিবি ক্যাম্পের ক্যান্টিনে কর্মরত ছিলেন। ফলে তার হাতে বিজিবির নগদ ৩ লাখ টাকা ছিল। এছাড়াও তিনি প্রতিমাসের প্রথম দিকে শহরের রাজনগরস্থ অনামিকা কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত স্কাইডেস্ক কমিউনিকেশন থেকে বিকাশের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা লেনদেন করে আসছিলেন।

এর প্রেক্ষিতে মাসের শুরুর দিকেই তিনি ওই বিকাশ এজেন্ট থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা নেন। টাকা নেয়ার পর থেকেই ফোন বন্ধ রেখে উধাও হয়ে যান বিজিবির ওই সৈনিক। এরপর থেকে তার খোঁজ পেতে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না।

সদর মডেল থানার ওসি মো. মাসুক আলী জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু উপজাতি সরকারি বিভিন্ন বাহিনীতে চাকরি করতে গিয়ে নানান অপরাধে জড়িয়ে গেছে। গত ২০১৫ সালে রাজধানীর ঢাকা হতে দুই উপজাতি পুলিশ সদস্য অস্ত্র গোলাবারুদ পাহাড়ের উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএসের নিকট সরবরাহ করতে গিয়ে আটক হয়। জানা যায় ওই দুই সদস্য পূর্বে জেএসএস সন্ত্রাসী সংগঠনে ছিলো। ১৯৯৭ পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওই দু’জনকে সরকার চাকরি দেওয়া হয় পুলিশ বাহিনীতে। এরপর হতে উপজাতি পুলিশ সদস্যদের নজরদারির রাখা হয়। সময় বেধে নজরদারি বন্ধ করলে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। উপজাতি পুলিশদের মধ্যে একটি অংশ পুলিশের চাকরির সুবাদে রাস্ট্রীয় অনেক গোপন তথ্য তাদের সংগঠন জেএসএসকে জানিয়ে দিতোই। বিগতকয়েকবছর ধরে কিছু উপজাতি সরকারি চাকরিজীবি নানান অপরাধ করে যাচ্ছে একের পর এক। গত তিনবছর পূর্বে খাগড়াছড়ি পানছড়িতেও এক উপজাতি পুলিশ সদস্য নিজের অস্ত্র হারিয়ে ফেলছিলো। তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যায়। রাঙ্গামাটি উপজাতি পুলিশ সদস্য থানা থেকে চাকমা গ্রামে গিয়ে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় থাকতো। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। বাঙ্গালিদের সঙ্গে বৈষম্য মূলক আচরণ করতো। চুক্তির শর্ত মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত হয়ে অনেক উপজাতি পুলিশ সদস্য রাস্ট্রীয় গোপন তথ্য ইউপিডিএফ-জেএসএসের নিকট সরবরাহ করে। রাঙ্গামাটিতে ২০১৬ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করার জন্য যেতো উপজাতি পুলিশ সদস্য নিয়ে। অভিযানের বিষয়টি উপজাতি সন্ত্রাসীরা স্বজাতি পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে আগাম যেনে যেতো। বিষয়টি অভিযানে নেতৃত্বধানকারী কর্মকর্তা জানার পর কৌশলে ওই উপজাতি পুলিশ সদস্যকে পরবর্তীতে বিভিন্ন অভিযানে নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। উপজাতি পুলিশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, উপজাতিদের সরকার বিশ্বাস করে রাস্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছে। এখন তারা যদি রাস্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন৷ এটা তাদের জন্য ক্ষতি হবে। এটা কোনভাবেই কাম্য না।

তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার এবং আইন – শৃঙ্খলা বাহিনীর রিপোর্টে ২১৮ জন পুলিশ সদস্যকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উপজাতি জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের রাস্ট্র অনেক বিশ্বাস করে চাকরি দেয়। এদেশে প্রায় ৩৫ হাজারের মতো উপজাতি সরকারি চাকরিতে রয়েছে। তারা যদি রাস্ট্রের বিশ্বাস ভঙ্গ করে তখন ভবিষ্যতে সরকারি চাকরিতে তাদের নেওয়ার ক্ষেত্রে রাস্ট্রকে নতুন করে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় উপজাতি শ্রমিকরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে৷ বাঙ্গালি শ্রমিকদের চেয়ে উপজাতি শ্রমিকদের অনেক চাহিদা সেটা তাদের কর্মদক্ষতা এবং সৎ হওয়ার কারণে। উপজাতিরা কাজে ফাঁকি দেয়না কাজের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিকতা এবং গুরুত্ব বহনকারী। এজন্যই গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় উপজাতি শ্রমিকদের অনেক চাহিদা। কিছু উপজাতির কারণে উপজাতিদের প্রতি বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে জনমতে৷ উপজাতিদের উচিত বরুণ বিকাশ চাকমার মতো লোভে পড়ে এমন কিছু না করা যেটার কারণে তাদের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে।

1 Comment
  1. Tapan says

    অপরাধীর পরিচয় একটাই, সে অপরাধী। কোন জাত, বর্ণ, ধর্ম বিবেচনা করার সুযোগ সেখানে নেই।
    তবু যদি বলেন উপজাতিরা সরকারি চাকরীতে ঢুকে রাষ্ট্রীয় কাজে অনিয়ম করছে। তখনও কিছু বলার থাকবে আমার।
    পুলিশ সদস্যরা ডোপ টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ে সেখানে কয়জন উপজাতি ছিল?
    মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন চোরাচালানের সাথে জড়িত, সেখানে কি উপজাতি ছিল? নিশ্চয়ই ছিলনা।
    স্বাস্হ্য অদিদপ্তরের ড্রাইভার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অদিদপ্তরের পিয়ন সহ আরো অসংখ্য সরকারী চাকরীজীবি কোটি কোটি টাকা দুর্নীতিতে ধরা পড়েছে। এমন কাজ কোন উপজাতি করেছে বলতে পারেন? নিশ্চয়ই পারবেন না।
    এছাড়াও পি কে হালদার, ডাঃ সাবরিনা সহ অসংখ্য ব্যাক্তি রাষ্ট্রীয় বিরোধী কাজে জড়িত থেকে দেশের ক্ষতি করছে। তাদের পরিচয়ও কি উপজাতি?
    নিশ্চয়ই না, তারা বাঙ্গালী।

    এরপর কি আর বলবেন সরকার উপজাতিদের চাকরি দেয়ার ব্যাপারে আগে ভেবে নিবে। পুনঃবিবেচনা করবে।
    সরকার নিশ্চয় একজনের দুষ্কর্মের জন্য বাকি মানুষের অধিকার বঞ্চিত করবেনা। সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিবেনা।

    তাই অনুরোধ থাকবে মুখরোচক বাক্য দিয়ে মিথ্যে বানোয়াট খবর রটাবেন না।
    অপরাধীর আলাদা কোন পরিচয় নেই। তার কুকর্মের শাস্তি তাকে পেতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More