পাহাড়ে নিরাপত্তার পরিস্থিতি কতটা নাজুক সেটা অনুধাবন করতে অক্ষম দায়িত্বশীলরা!

0

মোবারক হোসেন, কাপ্তাই

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সড়ক, এবং বান্দরবান ও রাঙামাটি সড়কে সন্ধ্যা ৬ টার পর নিরাপত্তা জনিত কারণে যানবাহন চলাচলের উপর অঘোষিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে জেএসএস সন্তু গ্রুপের পক্ষ হতে! অথচ দেশের বাকী ৬১ জেলায় কোথাও সন্ধ্যা ৬ টার পর যানবাহন চলাচলের উপর অঘোষিত বিধিনিষেধ আরোপ থাকার ইতিহাস নেই।
পাহাড়ে রাতে চলাচলের উপর অঘোষিত বিধিনিষেধ আরোপ থাকার বিষয়টি একটু গভীর ভাবে নিলে ভাবনার অবকাশ তৈরি হয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর।

অসুস্থ মানুষ, প্রসূতি নারী, কিংবা কেউ যখন জরুরী প্রয়োজনে রাতে সড়কে বের হয় তখন তাকে নিরাপত্তা অজুহাতে আটকে দেওয়া হয়। সেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্ত্রাসী কবলিত এলাকায় দিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে অনেক সময়। কারণ রাস্ট্র-প্রশাসন তার নিরাপত্তা দিবে না, এবং উক্ত অঞ্চলে নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সবাই সবার মত নীরব থাকছে, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা সমগ্র পাহাড়কে তাদের নিরাপদ সন্ত্রাসবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সর্বত্র অবৈধ ঝনঝনানি। একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাস্ট্রের ভিতরে আরোকটি রাস্ট্রের মত পরিস্থিতি। ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদ পার্বত্য জনজীবনকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা জানান দেয়,’ সন্ধ্যা ৬টার পর সড়কে যানবাহন চলাচলের উপর অঘোষিত বিধিনিষেধ।’ যুদ্ধ কবলিত এলাকায় কেবলমাত্র এইধরনের অঘোষিত বিধিনিষেধ থাকে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির পর কেন এমন পরিস্থিতি থাকবে? বিষয়টি কী ভাবনার বিষয় নয় কি? সন্ত্রাসীদের উত্থান এতটা বেড়েছে যার কারণে রাস্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখোমুখি।

পাহাড়ের নাজুক পরিস্থিতির জন্য অনেক প্রশ্ন এমনিতে উঠে আসে। তারমধ্যে কিছু প্রশ্ন-

১. পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর সরকার থেকে অসাংবিধানিকভাবে ৭২টি সুযোগ-সুবিধা নেয় (পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি) এতোকিছুর পরেও কেন হাজার হাজার অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্যমান থাকবে?

২. কেন পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি থাকবে?

৩. কেন পাহাড়কে অশান্ত করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুমের পাশাপাশি রক্তের হোলিখেলার বন্যায় পরিণত করবে?

৪. বছরের পর বছর জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান পরিস্থিতি কেন থাকবে?

৫. সাধারণ মানুষ কেন সন্ত্রাসী হামলার শিকার হবে?

৬. রাস্ট্র কেন অস্ত্রধারীদের লাগাম টেনে ধরবে না!!

৭. পার্বত্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে কেন “পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস) আইনের আওতায় আসবেনা?”

৮. পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরস্ত্র বাঙালী হত্যাকারীদের কেন বিচার হয় না, আর কেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হয় না?

৯. চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুমের অভিযোগ থাকার স্বত্বেও ৪টি অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কেন নিষিদ্ধ করা হয় না?

১০. পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা, এবং মানুষের জানমাল হেফাজতের অংশ হিসেবে কেন প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা হবে না??

উপর্যুক্ত বিষয়াদি অনুধাবন করতে অক্ষম দায়িত্বশীলরা। কথাটি এজন্য বলছি, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান সড়কে সন্ধ্যা ৬ টার পর নিরাপত্তা জনিত কারণে যানবাহন চলাচলের উপর যে, অঘোষিত বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে, তার ব্যাপারে কেন তারা প্রতিবাদ করেছে না? কেন তারা একত্রিত হয়ে সোচ্চার হচ্ছে না। কেন তারা সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে?
মূলত তারা নির্বিকার থাকার ফলে সন্ত্রাসীরা লাগামহীন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের উপর যুগ যুগ ধরে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার সাহস পেয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More