তাপস কুমার পাল, ব্লগার
সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র’। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত।
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে কোন প্রকার আঞ্চলিক দল কিংবা শাসনের বৈধতা নেই।
উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ না করে ১৯৯৭ সালে সংবিধান লঙ্ঘন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামের এক মহা অশান্তির দাবানল জাতীর ঘাড়ে চড়িয়ে দিয়েছেন।
সংবিধান বিরোধি সেই বিতর্কিত শান্তিচুক্তির ফলে দেশ, জাতী কিংবা সরকার নূন্যতম কোন লাভবানতো হয়নি বরঞ্চ জাতী দেখতে পাচ্ছে একটি সন্ত্রাসী দল এখন চারটিতে পরিণত হয়েছে।
বলা চলে চুক্তির মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে বৈধতা দিয়েছে সরকার।
পুলিশ প্রটেকশনে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পাহাড়কে আলাদা রাষ্ট্রগঠনে তৎপর।
সন্ত্রাসীরা এসকল অপকর্ম করার সুযোগ পায় এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে অবৈধ ভাবে দুইরকম নীতি থাকার
কারনে।
সংবিধানে আঞ্চলিকতার বৈধতা না থাকলেও তথাকথিত শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সরকার আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করে উপজাতি সন্ত্রাসীদেরকে সেটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে সুযোগ দিয়েছে।
সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’।
পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিদেরকে ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরির সুবিধা, পড়ালেখার সুবিধা , জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদে উপজাতিদের একচ্ছত্র মালিকানা দিয়ে সংবিধানের ২৭ নংঅনুচ্ছেদ কে সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কোন ব্যক্তিকে ভোটার হতে হলে প্রথমত: বাংলাদেশের নাগরিক, দ্বিতীয়ত: বয়স ১৮ বছর কিংবা তদ্ধউধর্ব এবং কোন যোগ্য আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা না হওয়া এবং কোন নির্দিষ্ট ঠিকানায় বসবাস করতে হবে এ রূপ শর্ত রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে সংবিধান বহির্ভূত অতিরিক্ত একটি শর্ত তথা ভোটার হতে হলে বৈধ জায়গা জমির মালিক হবার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দার সনদপত্র রাজা ও হেডম্যানদের উপর ন্যস্ত করেছে। পার্বত্য চুক্তির শর্তের ফলে এ অঞ্চলের হেডম্যান ও সার্কেল চিফরা উপজাতীয় হওয়ায় বাঙ্গালীদের ভূমির বৈধ মালিক হতে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।
যা কখনো কাম্য ছিলনা।
পাহাড়ে উপজাতি সন্ত্রাসীদের দ্বিতীয় অফিস হচ্ছে জেলা পরিষদ।
রাষ্ট্রীয় উপাদানের অন্যতম উপাদন হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড। এ ভূ-খণ্ড অর্থাৎ ভূমির মালিক হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের পক্ষে সরকার আর সরকারের পক্ষে প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকরা ভূমি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির সাধারণ অংশের ২৬নং ধারা পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৪ নং ধারা সংশোধন পূর্ব অনুমোদন ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ে পূর্ব অনুমোদন ও খাস জমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে পূর্ব অনুমোদন, কানুনগো, সার্ভেয়ার সহকারী ভূমি কমিশনারদের তত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ রূপে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এমনকি চুক্তি ২৬(খ) ধারার শর্ত অনুযায়ী স্বয়ং সরকার জেলা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোন সম্পত্তি হুকুম দখল কিংবা হস্তান্তর করতে পারবে না মর্মে উল্লেখ আছে। যা দেশের সংবিধান এবং সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সংবিধান পরিপন্থী ভিন্ন আইনকে পুঁজি করে উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা তাদের স্বপ্নের জুম্মল্যান্ড বাস্তবায়নে বাধাহীন চিত্তে অগ্রসর হচ্ছে।
রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অক্ষুন্নত রাখতে সরকারের উচিৎ সংবিধান বিরোধি এ চুক্তি বাতিল করে এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে সবার জন্য এক আইন চালু করা।
এমনকি এটা সংবিধান রক্ষা করেই করা সম্ভব।
দেশের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।
সেই সংবিধানের ৭নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে’৷
সংবিধানকে যদি সত্যিকারার্থে সর্বোচ্চ আইন মানা হয় তাহলে অটোমেটিকলি আঞ্চলিক পরিষদ আইন,জেলা পরিষদ আইন তথা শান্তি চুক্তি বাতিল বলে গণ্য করতে হবে।
সুতরাং কোন প্রকার কালক্ষেপণ না করে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে দেশে সংবিধান বিরোধি দুই নীতি বাতিল করে উপজাতি দেশদ্রোহী সন্ত্রাসীদের লাগাম টেনে ধরুন।