চুক্তির শর্তভঙ্গ করে যদি অবৈধ অস্ত্র নিয়ে থাকতে পারে, পাহাড়ে সেনারা থাকলে সমস্যা কী?
নিজেস্ব প্রতিবেদক
সরকার ৭২টি ধারা-উপধারায় সুযোগ-সুবিধা দিয়েও পার্বত্য উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর মন ভরাতে পারেনি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে তাদেরকে অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং একই দেশের জন্য দু’টি আইন করা হয়েছে। এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও পার্বত্য সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর সকলের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল পার্বত্য চুক্তির পরিপেক্ষিতে পাহাড়ের অস্থিরতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুম এবং রাষ্ট্রদোহিতামূলক তৎপরতা কমবে কিন্তু তার কোনটাই কমেনি। বরং চুক্তির সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সন্ত্রাসীরা চালকের আসনে অবতীর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির পর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করে এবং অধিকাংশ সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়। জানা যায় ২৩৯ টি সেনা ক্যাম্প সরকার ইতোমধ্যে পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়। মূলত সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল ও মায়ানমারের আরাকান অঙ্গরাজ্য থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় এবং দেশগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। গত-২০২১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান পর্যায়ে ৫১তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ভারতের মাটিতে। উক্ত বৈঠকে বাংলাদেশের বিজিবি অভিযোগ করে জানান, ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি করে আছে। বিজিবি’র এমন অভিযোগের জবাবে ভারতীয় বিএসএফ জানায়, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। এই থেকেই সহজে অনুমেয় যে, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ভারতের মাটি ব্যবহার করছে এবং ভারত তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।
বর্তমানেই ১৯৯৭ সালের পূ্র্বেকার মত পার্বত্য চট্টগ্রামে হামলা ও হত্যা অতটা না থাকলেও এখন কিন্তু অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ, চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা সংকট ও নাজুক পরিস্থিতি চলছে। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে শকুনের দৃষ্টি দিয়েই আছে। এনজিও, দাতাসংস্থা ও খ্রিস্ট মিশনারী গ্রুপগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশর মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের অর্থ, কূটনীতিক ও গণমাধ্যম প্রচারেই সহযোগিতা দিচ্ছে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা শক্তিসঞ্চারণ করে বর্তমানে পূর্বের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি; গোপনে-প্রকাশ্যে বাংলাদেশ ভেঙে জুম্মল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠন এবং তার প্রশাসনিক অবকাঠামো করে শক্তিসামর্থ্য জানান দিচ্ছে; পার্বত্য চুক্তির পরও উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নির্বাহী প্রশাসনের উপর হামলা চালিয়েছে; ধ্বংস করেছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এমন পরিস্থিতিও সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে এবং তা প্রতিক্রিয়াধীন রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দক্ষ জনবল না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই তারা এখানকার সন্ত্রাসবাদ, অবৈধ অস্ত্রধারীদের শক্তিসামর্থ্য ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতার সঠিক বার্তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌছাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাচ্ছেনা এবং এখানকার প্রকৃত বাস্তবতা জানতে পারছেন না। তাই সেনা প্রত্যাহারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের হাতে ন্যস্ত করেছে। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা এবং বাঙ্গালীর নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আঞ্চলিক পরিষদের হাতে আইন-শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়সাধন ২০২১ সনের ২ নং প্রবিধানমালা ন্যস্ত করার কারণেই পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো স্বজাতি পুলিশ নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেয়ে যাচ্ছেন। বিট্রিশদের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহারিত পার্বত্য উপজাতিরা আজ পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিজেদের দাবি করেই এ অঞ্চল থেকে সেনা ও বাঙালি প্রত্যাহার দাবি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে৷ যা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস। বিট্রিশ কর্তৃক প্রণীত বেআইনি (পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০) কে আজ আইন হিসেবে ব্যবহার করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম তাদের দাবি করছে। অথচ এই উপজাতীয়রা ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, ভারত ও মায়ানমারের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য হতে যুদ্ধে বিতাড়িত হয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয়-প্রশ্রয় লাভ করে। ভিনদেশী এই দখলদাররা আজ নিজেদের এই দেশের ভূমিপুত্র তথা আদিবাসী হিসেবে দাবি করে এবং আদিবাসী হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে হটানোর নীল নকশা বাস্তবায়নে জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীর গোষ্ঠীর দারস্থ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে, সন্ত্রাসবাদ চলে তা দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছেনা। এদেশের গণমাধ্যম, বামধারার রাজনৈতিকবিদ ও সুশীলরা সবসময় পাহাড়ের চাঁদাবাজির মাসোহারা নিয়ে পাহাড়ের সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন জানিয়ে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করেছেই এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও ধর্ষণ ধামাচাপা দিয়ে আসছে। যার কারণে দেশের ৯৫% মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর ৫০০০ হাজার সশস্ত্র সদস্য ছিল। গোলাম মুর্তজার শান্তিবাহিনী গেরিলা জীবন বইয়ে এমনই তথ্য লেখা হয়েছে। ৫০০০ সশস্ত্র সদস্য থেকে ১৯৯৭ সালে ৮৪০ জন সশস্ত্র সদস্য কীভাবে হল? তা জানতে চাওয়া আমার এই মন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৭-২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপেই মোট জেএসএসের ১৯৪০ জন্য সরকারের নিকট অস্ত্র আত্মসমর্পণ করে। ৫০০০ সশস্ত্র সদস্য না বেড়েই কীভাবে ১৯৪০ জন হয়? বাকী সশস্ত্র সদস্যরা কোথায়? এই থেকে খুব সহজেই অনুমেয় যে, জেএসএস ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর সরকারের নিকট খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তাদের সকল সশস্ত্র সদস্য অস্ত্র আত্মসমর্পণ করেনি। ভাঙ্গা, মরিচে ধরা অস্ত্রসহ ৭৪০ জন সদস্য অস্ত্রজমা দিয়ে এর মধ্যে ৭২৪জন সরকারি চাকরি নেন। এরমধ্যেই ৭২৪ জন পুলিশ বাহিনীতে চাকরি নেন। জেএসএসের মোট ১৯৪০ জন সদস্য এবং তাদের অগণিত আত্মীয় -স্বজন সরকার থেকে সরকারি চাকরি, রেশন ও সুযোগ-সুবিধা নেওয়াসহ পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারা-উপধারা মোতাবেক সুবিধা গ্রহণ করে সন্ত্রাসী তৎপরতায় পূর্বের ন্যায়ে বিভিন্ন উপায়ে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও জেএসএস সভাপতি অথাৎ পার্বত্য চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষরকারী খোদ সন্তু লারমা নিজেই ২০১৩ সালে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি’ সাংবাদিক শামীমা বিনতেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করে বলেন, “১৯৯৭ সালে আমাদের সব সশস্ত্র সদস্য অস্ত্র জমা দেয়নি। কিছু সংখ্যক সশস্ত্র সদস্য অস্ত্র জমা দিয়েছে। আমাদের এখনো আরো কয়েকশ সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। সন্তু লারমার এমন বক্তব্যের পরেও পার্বত্য চুক্তি নিয়ে ভাঁওতাবাজি করার অভিযোগে এবং পার্বত্য চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনেই সন্তু লারমা বিরুদ্ধে সরকার কোনপ্রকার আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি৷ সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার নিরস্ত্র পার্বত্য বাঙালীকে হত্যা করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৭২০ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তার বিচার দাবি করেনি রাষ্ট্র ও প্রশাসন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্তু লারমার জেএসএস চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ৪ভাগে বিভক্ত হয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন-গুমে লিপ্ত হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সমগ্র পাহাড়কে ঘিরে রেখেছে। ভারতের মাটিতে একাধিক ঘাঁটি গেড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন করার স্বপ্ন দেখছে। সন্ত্র লারমার জেএসএস, প্রসিত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফসহ অন্যান্য উপজাতি সন্ত্রাসীরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিদ্যমান থাকতে পারে তাহলে দেশের অখণ্ডতা রক্ষারস্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে সমস্যা কোথায়??? পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক শর্ত হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র পরিহার করা। তারা যদি চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করতেই পারে তাহলে সরকারের উচিত অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে পাহাড়ে অনির্দিষ্টকাল সেনা মোতায়েন করা। এটা একদম যৌক্তিক কথা।
যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিদ্যমান থাকবে ততদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দেশের ৬১ জেলায় যদি সেনাবাহিনী থাকতে পারেই পার্বত্য ৩ জেলায় কেন সেনাবাহিনী থাকতে পারবে না??? সেনাবাহিনী দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়ও মোতায়েন থাকবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদে।
পার্বত্য জেলার অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা একমাত্র সেনাবাহিনীকে ভয় করে। তারা পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ভয় করেনা। সেনাবাহিনী তাদের একমাত্র ভয়। তাই তারা পাহাড় হতে সেনা প্রত্যাহারের দাবি তোলে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থেই অতিবিলম্বে প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা হোক এবং সেনাবাহিনীর খর্ব করা ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।