পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের জারিকৃত প্রবিধানমালা অসাংবিধানিক।

0


১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবু হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা) মধ্যকার ৭২টি ধারাসহ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ সম্পাদিত হয়। উক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাংলাদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যার ফলে এই চুক্তি নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। যদিও চুক্তির অধিকাংশই ধারা বর্তমানে বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু ধারা বাস্তবায়ন প্রতিক্রিয়াধীন এবং চলমান। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক গত ২৮ শে ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দে ২০২১ সনের ২ নং প্রবিধানমালা প্রজ্ঞাপন জারি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮, (১৯৯৮ সালের ১২ নং আইন) এর ২২ (ঘ) এর সহিত পঠিত উক্ত আইনের ধারা ৪৬ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আইন-শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়সাধন প্রবিধানমালা ২০২১, (২০২১ সনের ২ নং প্রবিধানমালা) এতদ্বারা জনস্বার্থে জারি করা হইলো। বস্তুত যা তাদের প্রণয়ন ও প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার সাংবিধানিক এখতিয়ার নেই। এই নিয়ে সাংবিধানিক বাধা-বিপত্তি ও কারণ তুলেধরা হইল-

সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র’। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত।
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে কোন প্রকার আঞ্চলিকতার কিংবা শাসনের বৈধতা নেই এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন (হিলট্যাক্স ম্যানুয়েল ১৯০০) চলমান রাখার কোনো সুযোগ নেই। এই থেকে প্রতিয়মান হয় যে, পার্বত্য চুক্তির অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অবৈধ এবং তাদের আইন-শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়সাধন বিষয়ক জারীকৃত প্রবিধানমালা টি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

দেশের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।
সেই সংবিধানের ৭নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে’৷
সংবিধানকে যদি সত্যিকারার্থে সর্বোচ্চ আইন মানা হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ২০২১ সনের ২ নং প্রবিধানমালা (শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়কসাধন) ও পুলিশকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার হতে পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলোতেই হস্তান্তর করা, তথা পার্বত্য চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। যেহেতু পার্বত্য চুক্তি সংবিধান অনুযায়ী হয়নি, চুক্তির অধিকাংশ ধারা সাংঘর্ষিক যা বাতিল এবং সংশোধনের দাবি রাখে। সুতরাং এটি বাতিল করতে বা সংশোধন করতে এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া উচিত।

যথাসম্ভব- ২০০৩ সালে বদিউজ্জামান নামে কাউখালীর এক অধিবাসী পার্বত্য চুক্তিকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করে সংবিধানের সাথে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। উক্ত রিট পিটিশনে তিনি রায় পান৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে হাইকোর্ট অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দেয়। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে টিকে রাখতে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আপিল করে রায়টি স্থগিত করে।

বর্তমানে স্থগিতাদেশ বাতিলের জন্য আপিল করা উচিত অথবা বাঙ্গালী ভিত্তিক সংগঠন গুলোকে চাঙ্গা করে মাঠ পর্যায় থেকে গণআন্দোলন সৃষ্টি করা উচিত।
সংবিধান ও পুলিশ প্রবিধান ব্যতি রেখেই পুলিশ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত হলে এ অঞ্চলে বাঙ্গালীর অবস্থান খুবি নাজুক হতে পারে এবং সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অকার্যকর করতে পারে আর এরফলেই এ অঞ্চলের ভূখণ্ড দ্বিখণ্ডিত হতে পারে ও নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হতে পারে। সংবিধান, আইন তৈরি করার ক্ষমতা মহান জাতীয় সংসদের ও রাষ্ট্রপতির। এর বাহিরে গিয়ে কেউ আইন করার এখতিয়ার নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More