পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পন্ন বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য বাঙ্গালীরা নিজদেশে হবে পরবাসী।

0

জেএসএস বরাবরই অভিযোগ করে আসছে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। কিন্তু সরকার বলছে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক। সূত্রে জানা যায় চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে জেএসএস কূটনীতিক মাধ্যমে জোরালোভাবে সরব হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক দপ্তরগুলোতে জেএসএস প্রতিনিধিদের আসা-যাওয়া বেড়েছে। সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে পার্বত্যাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সরকার কত পারসেন্ট বাস্তবায়ন করেছে তার একটি হিসাব নিকাশ দেখা যাক-
পার্বত্য চুক্তির সর্বমোট ৭২টি ধারার ৯৯টি উপ-ধারা রয়েছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যেই ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে বড় ধারাগুলো সরকার বাস্তবায়ন করেছেন। পার্বত্য জেলার পুলিশ ও স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করে আঞ্চলিক পরিষদ প্রবিধান জারি করেছিল। যার প্রেক্ষিতে পার্বত্য বাঙ্গালীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে নিরাপত্তাহীন হবে। এই প্রতিবাদ পার্বত্য বাঙালিরা আন্দোলনও করেছিল। সরকারি সূত্র বলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।

সরকারি সূত্রগুলো আরো বলছে-পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েক দফা সংলাপের পর সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই চুক্তির কথা তুলে ধরেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে (মন্ত্রীর পদমর্যাদা) আহ্বায়ক করে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর হইতে অদ্যবধি পর্যন্ত কমিটির ১০টির মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সরকারের দাবি- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ হলো- এ চুক্তির ফলশ্রুতি স্বরূপ ১৫ জুলাই ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তির খ খণ্ডের ধারা ৩৪ অনুসারে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৩০টি করে এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ২৮টি বিভাগ জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, অবশিষ্ট বিষয়/বিভাগগুলো হস্তান্তরের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে যথেষ্ট আন্তরিক এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

স্থানীয় বাঙালি অধিবাসীদের অভিযোগ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বেশিরভাগ ধারায় বাস্তবায়িত, কিছুসংখ্যক ধারা অবাস্তবায়িত। তবে পার্বত্য চুক্তির বেশিরভাগ ধারাই বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। পার্বত্য চুক্তি বাংলাদেশ সংবিধান মোতাবেক করা হয়নি। চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী অত্রাঞ্চল থেকে বিতাড়িত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি (হিলটেক্স ম্যানুয়েল ১৯০০) পার্বত্য চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে এ অঞ্চলের বাঙ্গালীরা ভূমির উপর পূর্ণ অধিকার হারাবে। রোহিঙ্গাদের মত বাস্তহারা হবে। নিজদেশে হবে পরবাসী। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী চুক্তির অন্তরালে ইতোমধ্যে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পথেই হাঁটছে। একটি দেশের মধ্যে দু’টি আইন। যা বাংলাদেশ সংবিধান স্পষ্ট লঙ্ঘনের শামিল। বাংলাদেশের মত ছোট দেশেই স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা দেওয়া এবং আলাদা শাসন-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন খুবি হতাশাজনক। দেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩জেলায় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা জারি হলে একসময় বিচ্ছিন্নবাদীরা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইতিহাস এমনই বলে। পার্বত্য চুক্তির পূর্বে অসাংবিধানিক ধারাগুলো নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি এবং ভবিষ্যত পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রদেশ বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হয়ে গেলে এ অঞ্চলে কী হতে পারে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আলোচনা-পর্যালোচনা করেনি। যার প্রেক্ষিতে আত্মঘাতী পার্বত্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।

একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে আমার অভিমত- এ চুক্তি একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর বা দক্ষিণ সুদানের মত অবিকল খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের দিকে ধাবিত করবে। যা বাস্তবায়ন করতে পশ্চিমা/ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থ সহযোগিতা ও ইন্ধন দিয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক এনজিও, দাতাসংস্থা ও মিশনারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিভিন্নভাবেই সহযোগিতা দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভারতও এর পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন-
পার্বত্য চুক্তির এতসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরেও উপজাতি সন্ত্রাসীরা কোন বিবেকে অস্ত্র নিয়ে এ অঞ্চলে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তাদের এমন অপতৎপরতার বিশেষ উদ্দেশ্য কী? বিশেষজ্ঞদের অভিমত- উপজাতি সন্ত্রাসীরা অকৃতজ্ঞ। রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চেয়ে অধিক সুবিধা ভোগ করে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে। যা নিমকহারাম জাতির পরিচয়বহন করে। তারা কেউ এ দেশের ভূমিপুত্র নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো হতে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর বিতাড়িত হয়ে বাংলার ভূখণ্ডে আশ্রয় লাভ করে। অথচ আজ তারাই নিজেদের এই দেশের ভূমিপুত্র তথা আদিবাসী দাবি করে! যা দুঃখজনক।

কথিত আছে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী আগমন করার পূর্ব হতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলার ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে আছে। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত ভাগ হওয়ার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নেতারা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি ভারতের পতাকা এবং বান্দরবান অংশে মায়ানমারের পতাকা উত্তোলন করেন। এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেন তাদেরই দলনেতা আত্মস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায়। যুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে। এই ত্রিদিব রায় ছিলেন- বর্তমান রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা। এই থেকে সহজেই অনুমেয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা নয় এবং বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী আগমণ সমস্যা নয়। এই সমস্যা উপজাতি সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের সঙ্গে থাকতে না চাওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা। তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৫ সালের পর হতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালীর উপর হামলা শুরু করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরস্ত্র ৩৮ হাজার বাঙ্গালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। পার্বত্য চুক্তির পরেও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পূর্বের ন্যায় রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয় তাদের এমন অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More