আইন-শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়সাধন বিষয়ক জারীকৃত প্রবিধানমালা অসাংবিধানিক।

0

ব্লগার মুক্তমত

মোঃ সোহেল রিগ্যান– সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র’। অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত।
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রে কোন প্রকার আঞ্চলিকতার কিংবা শাসনের বৈধতা নেই। এই থেকে প্রতিয়মান হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়সাধন বিষয়ক জারীকৃত প্রবিধানমালা টি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

দেশের সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।
সেই সংবিধানের ৭নং ধারার ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে’৷
সংবিধানকে যদি সত্যিকারার্থে সর্বোচ্চ আইন মানা হয় তাহলে অটোমেটিকলি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও আঞ্চলিক আইন- শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়কসাধন প্রবিধানমালা, জেলা পরিষদ আইন এবং পার্বত্য পুলিশকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার হতে পার্বত্য জেলা পরিষদকে হস্তান্তর, তথা পার্বত্য চুক্তি বাতিল বলে গণ্য করতে হবে। এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া উচিত।

যথাসম্ভব- ২০০৩ সালে বদিউজ্জামান নামে বান্দরবানের এক বাঙ্গালী পার্বত্য চুক্তিকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করে সংবিধানের সাথে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। উক্ত রিট পিটিশনে তিনি রায় পেয়েছেন৷ পার্বত্য চুক্তিকে হাইকোর্ট অসাংবিধানিক হিসেবে রায় দেয়। পরবর্তীতে সরকারের চাপের কারণে এবং পার্বত্য চুক্তিকে টিকে রাখতে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আপিল করে রায়টি স্থগিত করে।

বর্তমানে স্থগিতাদেশ বাতিলের জন্য আপিল করা উচিত অথবা বাঙ্গালী ভিত্তিক সংগঠন গুলোকে চাঙ্গা করে মাঠ পর্যায় থেকে গণআন্দোলন সৃষ্টি করা উচিত।
পার্বত্য পুলিশ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত হলে এ অঞ্চলে বাঙ্গালীর অবস্থান খুবি নাজুক হতে পারে এবং সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম লাগাম হারাবে আর এই অঞ্চলের ভূখণ্ড দ্বিখণ্ডিত ও নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হবে।

পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে পুলিশ হস্তান্তর করলে পার্বত্য জেলা পরিষদ পুলিশের এসআই ও সদস্য পর্যন্ত নিয়োগ করিতে পারিবেন। পুলিশ জেলা পরিষদের নির্দেশে চলতে বাধ্যহবে। বাংলাদেশ সংবিধান ও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী পুলিশের সবকিছু দেখবাল করার দায়িত্ব পুলিশ প্রধানের অথাৎ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের। পার্বত্যাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় আইন অকার্যকর করে অসাংবিধানিকভাবে পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলোর হাতে পুলিশ হস্তান্তর করা একটি সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ৷

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ২০২১ সনের ২নং যে প্রবিধানমালা তৈরি করেছে এবং জারি করেছে তা তারা করার এখতিয়ার রাখেনা। দেশের জন্য আইন তৈরি করার জন্য মহান জাতীয় সংসদ রয়েছে এবং রাষ্ট্রপ্রতি রয়েছে৷ তাদের ব্যতীত রেখে অসাংবিধানিক পার্বত্য চুক্তির আলোকে যে, ২০২১ সনের প্রণীত ২নং প্রবিধানমালা তৈরি করেছে, তার বৈধতা নেই। এই অসাংবিধানিক আইন পার্বত্যাঞ্চলে কার্যকর করার কোন সাংবিধানিক বৈধতা নেই এবং এটি কার্যকর করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সন্ত্রাসবাদ বেড়ে যাবে৷ এ অঞ্চলে হানাহানি, বৈষম্য, হত্যা, ধর্ষণ, রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা ও চাঁদাবাজি চুক্তির পূর্বের মত বৃদ্ধি পাবে৷ বর্তমানে পুলিশ পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করতে সক্ষম নয় এবং পার্বত্য বাঙ্গালীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ গুলোর চেয়ারম্যান হচ্ছে উপজাতি। এমতাবস্থায় পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে পুলিশ হস্তান্তর হলে বাঙ্গালীরা পুলিশ কর্তৃক হয়রানির শিকার হবে। মিশ্র পুলিশের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ বাহিনীকে মেরুদণ্ডহীন করে ৯০% উপজাতি পুলিশ নিশ্চিতকরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ২০২১ সনের ২ নং প্রবিধানমালা বস্তুত তাই। এই থেকে পরিত্রাণ পেতে তীব্র আন্দোলনের বিকল্প নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More