হেডম্যান কার্যালয় নির্মাণে আধুনিক মেগা প্রকল্প;বাঙ্গালীরা ভিটেমাটি হারানোর সম্ভবনা!

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান– হেডম্যান কার্যালয় নির্মাণে আধুনিক মেগা প্রকল্প;বাঙ্গালীরা ভিটেমাটি হারানোর সম্ভবনা!

কথিত আছে উপজাতীয়দের ভূমি অধিকারের আতুঁরঘর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি’। আর আস্তে আস্তে শাসনবিধি বাস্তবায়ন করতে তৎপর হয়ে উঠছে উপজাতি নেতৃত্বশ্রেণী। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে পার্বত্য বাঙ্গালীরা ভূমি হারিয়ে পাচ্ছে। হেডম্যান প্রথার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী শূন্য হবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

হেডম্যান নিয়োগ ও তার কাজ করার এখতিয়ার দিকসমূহ তুলে ধরা হলো-

পার্বত্য জেলাসমূহ (আইন রহিত ও প্রয়োগ এবং বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ১৬ নং আইন ) হেডম্যান ৬:

(১) আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলাসমূহে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের জন্য উহাদের প্রত্যেক মৌজায় হেডম্যান থাকিবেন, এবং তাঁহারা তহশীলদারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইবেন৷

(২) ডেপুটি কমিশনার হেডম্যান নিযুক্ত করিবেন এবং অযোগ্যতা বা অসদাচরণের কারণে তিনি তাঁহাকে তাঁহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবেন৷

(৩) হেডম্যান নিয়োগ বা অপসারণের পূর্বে ডেপুটি কমিশনার চীফের সহিত পরামর্শ করিবেন৷

(৪) হেডম্যান সরকারী কর্মচারী বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বলিয়া গণ্য হইবেন না৷

(৫) ডেপুটি কমিশনার, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, হেডম্যানের জন্য কমিশন, সম্মানী বা অন্যবিধ সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করিবেন৷

(৬) ডেপুটি কমিশনার, সরকারের নির্দেশক্রমে বা পূর্বানুমোদনক্রমে, হেডম্যানকে অন্য কোন দায়িত্বও অর্পণ করিতে পারিবেন৷

এই ক্ষমতাবলে নিয়োগ পেয়ে হেডম্যানরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সবধরনের ভূমির উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার অধিকার পান। তাদের নিয়োগ ও ক্ষমতাবল পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি’র অংশ। কিন্তু এই শাসনবিধি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং পার্বত্য বাঙ্গালী ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরুপ বটেও। প্রিয় পাঠক আপনারা পড়ছেন Hill Writer Forum (HWF) & Hill Blogger Forum (HBF) এর পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে লেখা। তাই প্রচারের স্বার্থে শেয়ার করুন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির পূণাঙ্গ ব্যাখ্যা না দিয়ে বর্তমান বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে হেডম্যানের ক্ষমতাবলের ক্ষতিকর দিকসমূহর অংশ বিশেষ সবার জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি-
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠীকে ব্রিটিশরা তাদের শাসন আমলে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে তাদের উপজাতি দোসরদের রক্ষা করতে এবং ব্রিটিশ আগাসন ও আধিপত্য ধরে রাখতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি’ (হিলট্র্যাক্স ম্যানুয়েল ১৯০০) তৎকালীন জারি করে বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই শাসনবিধির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা ভূমি অধিকার হতে বঞ্চিত হয়েছে এবং রাষ্ট্র এ অঞ্চলের ভূমির উপর সবধরনের কর্তৃত্ব হারিয়েছে। মোদ্দা কথা হচ্ছে রাষ্ট্র এবং বাঙ্গালী জনগণের জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি’ মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। মূলত এই কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাস্তবায়নে উপজাতি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও উপজাতীয় রাজনৈতিক নেতারা তৎপর। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির অংশ কিন্তু উপজাতিদের প্রথাগত ভূমি অধিকার আইন। হেডম্যানকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির মালিকানা ও খাস জায়গা চিহ্নিত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। হেডম্যান ভূমির সব মালিকানায় উপজাতিদের প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যার আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়রা ব্রিটিশদের মৃত আইন পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২০ সালের বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) দিনব্যাপি খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হলে ‘সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’ আয়োজনে তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় সম্মেলনে জেলার ৩০০ জন হেডম্যান ও ৭০০ জন কার্বারি অংশ নেন। এ ছাড়া ৩ পার্বত্য জেলার হেডম্যান-কার্বারি নেতারাও যোগ দেন। এতে উদ্বোধক ছিলেন, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি (খাগড়াছড়ি) ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি (বান্দরবান)।

অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’র সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি বাসন্তী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস্-চেয়ারম্যান আশীষ কুমার বড়–য়া, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মো: রিয়াজুল করিম, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেল রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অবৈতনিক সদস্য চিংকিউ রোয়াজা।

অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পার্বত্য মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ ব্যবস্থায় হেডম্যান (মৌজা প্রধান) ও কার্বারীদের (পাড়া প্রধান) মর্যাদা অত্যন্ত সুপ্রাচীন। এক’শ বছরের প্রাচীন এই সামাজিক নেতৃত্ব বংশ পরম্পরায় সরকারি ভূমি ব্যস্থাপনা, সাধারণ প্রশাসনকে সহযোগিতা ছাড়াও সমাজিক বিচার-আচারেও গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে তাঁদের অংশগ্রহণকে অবশ্য স্বীকার্য বলে নির্দেশ দিয়েছেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। শুধু তাই নয়, তাঁরা নিজেদের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতেও তদারকি করতে পারবেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, তাঁদের কল্যাণে ১০ লক্ষ টাকার একটি কল্যাণ ফান্ড গঠন, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিতে হেডম্যান-কার্বারীদের প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্তি, আগামী অর্থ বছরে তিন জেলার হেডম্যানদের জন্য আধুনিক ও স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে সম্মানি বৃদ্ধির অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

পার্বত্য মন্ত্রী, এমপি ও সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকা সরকারি আমলা এবং এ অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী গত ২০২০ সালের (২৬ ফেব্রয়ারী) তিন জেলার হেডম্যানদের জন্য আধুনিক ও স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় হেডম্যানদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (CHTBD) আধুনিক ও স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করার কাজ হাতে নিয়েছে।

তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান কার্যালয় নির্মাণের স্থান নির্ধারণ ও ভূমির রেকর্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রেরণ প্রসঙ্গে তৎকালীন ডিসিদের পাঠানো একটি চিঠি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিভিন্ন শাখায় পাঠানো অনুলিপির একটি কপি পাওয়া গেছে।

উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে , পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে তিন পার্বত্য জেলার ৩৭৫ টি মৌজায় স্থায়ী হেডম্যান কার্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের নিমিত্ত প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। গত ১৬/০৮/২০২০ খ্রি : তারিখে অনুষ্ঠিত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বোর্ডের “ পরিচালনা বোর্ড ” -এর ১ম সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। হেডম্যান কার্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে কার্যালয়ের নিজস্ব রেকর্ডিয় / বন্দোবস্তীকৃত ভূমি থাকা প্রয়োজন এবং প্রকল্প প্রস্তাবনায় তা সংযোজন অত্যাবশ্যক। এমতাবস্থায় , বর্ণিত হেডম্যান কার্যালয় নির্মাণ কাজের প্রকল্প প্রণয়নের সুবিধার্থে স্ব স্ব জেলায় সংশ্লিষ্ট মৌজায় সার্কেল চিফ / হেডম্যানগণের সাথে পরামর্শক্রমে বর্ণিত হেডম্যান কার্যালয়ের স্থান নির্ধারণ ও নির্ধারিত ভূমির রেকর্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রেরণ করার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানানো হলো। জেলা প্রশাসক রাঙ্গামাটি / বান্দরবান / খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।

মো : নূরুল আলম নিজামী ভাইস – চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব ফোন- ০৩৫১-৬২২৯৬ ইমেইল- vc@chtdb.gov.bd তারিখ : ৩ /৯ /২০২০ খ্রি . স্বাক্ষরিত একটি পত্র জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়ার কপি পাওয়া যায়। যার স্মারক নং – 29.31.0000.008.14.017.19

ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি হেডম্যানের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে; হেডম্যানরা দুর্নীতিবাজ, অবৈধভাবে ঘুস গ্রহণ করে ও হেডম্যান রিপোর্ট প্রদান করতে বৈষম্যমূলক আচরণ করে! হেডম্যানদের বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে হেডম্যানদের আধুনিক কার্যালয় নির্মাণ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চিঠি প্রেরণের ১ বছর ৪ পর খবরটি চাউর হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক কিছু গোপনে বাস্তবায়ন করা হয়। তেমনি এই আদেশটিও গোপন রাখা হয়েছে। এখন প্রকাশিত হওয়াতে পার্বত্য বাঙ্গালীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা ভিটামাটি হারা হবে। হেডম্যানদেরকে অসাংবিধানিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি মোতাবেক সম্পূর্ণ ক্ষমতাবল দিলে তারা এ অঞ্চল থেকে বাঙ্গালীদের হটাতে ভূমি সংক্রান্ত প্রথাগত আইনের মাধ্যমে নানান ষড়যন্ত্র করবেই। তাই রাষ্ট্রকে তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More