কিনা মোহন চাকমাকে গাছের সাথে বেধে গায়ের চামড়া তুলে হত্যা করা হয়- সে হত্যার আসামী আটক।

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান– রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গম জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন, কিনা মোহন চাকমা। যিনি জুরাইছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রুপ কুমার চাকমার পিতা। ১৯৮৫ সাল নাগাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী ত্যাগ করেন তিনি। ত্যাগ করার অন্যতম কারণ ছিলো তাদের অন্যায়, চাঁদাবাজি, নৃশংসতা ও বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড। শান্তিবাহিনী কমান্ডার সত্যবাদী দেওয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে কিনা মোহন চাকমাকে ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর হত্যা করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়।

অপহরণ করার পর নির্জনস্থানে নিয়ে কিনা মোহন চাকমাকে গাছের সাথে বেধে গায়ের চামড়া তুলে ফেলা হয় এবং তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত ও দুই হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাকে এমন নির্মম ও নৃশংস নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। কথিত আছে গাছের সাথে তাকে পেরেকও মারা হয়। কিনা মোহন চাকমাকে এমনভাবে হত্যা করার পর পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ জেএসএস এর প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে এমনকি এই হত্যার পরে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম কেঁপে উড়ে। কিনা মোহন চাকমার ছেলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রুপ কুমার চাকমাও ছিলো অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদী। বাবা হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি ২০১৭ সালের ১৪ মে জেএসএসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, যদি বাহুতে শক্তি থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেন? বাহু শক্তি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে দেখাও। তার এমন প্রতিবাদী বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি ২০২০ সালের ৬ মে কিডনি ও পিত্ত থলীতে রোগ থাকায় চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যবরণ করেন।

সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠ নেতা কিনা মোহন চাকমার অপহৃরণ ও হত্যা মামলার ওয়ারেন্ডট ভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বনযোগীছড়া ইউনিয়নের হাজ্যামাছড়া এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তেজেন্দ্র নাথ চাকমার জেষ্ঠ্য ছেলে বুদ্ধমনি চাকমাকে আটক করা হয়। জুরাছড়ি সেনা জোন ২বীরের উপ-অধিনায়ক মোঃ এহতে শামুল হকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪২ লিটার বাংলা মদ, দুইটি মোবাইল সেট, ১টি চাঁদা আদায়ের রসিদ বই পাওয়া যায়।

সেনা সূত্র জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (মুল) দলের সন্ত্রাসী ও কিনা মোহন চাকমার অপহৃরণ ও হত্যা মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি বুদ্ধমনি চাকমা ঘরে অবস্থানের গোপন সংবাদের তথ্য পেয়ে সেনা বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

জুরাছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. শফিউল আজম বলেন, সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ওয়ারেন্ডট রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে অদ্য (রবিবার) কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More