ভূমি বেদখলের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ইউপিডিএফ’র নাশকতা: পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনারা কৌশলী!

0

মোঃ সোহেল রিগ্যান– পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফেরতদান, বাঙ্গালীদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পূনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে সাজেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ প্রসিত)’।

অদ্য সোমবার (১০ অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ) সকাল ১০টার সময় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের বাঘাইছড়ি ইউনিটের উদ্যোগে সাজেক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দ্বপদা নামক স্থানে সাজেকের মূল সড়কে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে যোগদান করার জন্য কয়েকদিন আগে থেকে জনসাধারণকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। বিগত বছরগুলোতে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুম ও অস্ত্রবাজি করে জনসাধারণের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ইউপিডিএফ। সাধারণ মানুষ ইউপিডিএফ এর ভাঁওতাবাজির স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন বুঝে গেছে। তাই সাধারণ মানুষদের মধ্যে আস্তা সৃষ্টি করাটা লক্ষ্যে লোক দেখানো কিছু আন্দোলন ইউপিডিএফ জন্মলগ্ন থেকে করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সাজেকে আজকে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিভিন্ন দাবির ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে রাষ্ট্র বিরোধী শ্লোগান দিয়ে এলাকার দুই সহস্রাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীকে সমাবেশ স্থলে নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে ইউপিডিএফ। সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাশকতার লক্ষ্যে এবং ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে ইউপিডিএফ একের পর এক উস্কানিমূলক সেনা, বাঙ্গালী ও রাষ্ট্র স্লোগান দিতে থাকে। তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে সেনাবাহিনীর দিকে তেড়ে আসে। সেনাবাহিনী তাদের এই ষড়যন্ত্র ও নাশকতার তৎপরতা বুঝতে পেরে তাদের পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে কৌশলী হয়ে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়।

সমাবেশে ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের অন্যতম সংগঠক আসেন্টু চাকমা’র সভাপতিত্বে ও ইউপিডিএফ সদস্য সুমন চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি কালো বরণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিউটন চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রূপসী চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বিতাড়িত করতে ভূমি বেদখলকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ভূমি বেদখল হচ্ছে। বান্দরবানের লামায় ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানিকে ব্যবহার করে সেখানকার ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের চেষ্টা চলছে। এছাড়া কথিত উন্নয়ন, পর্যটন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ নানা উপায়ে বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক আসেন্টু চাকমা বলেন, আজকে এই সাজেকে পর্যটনের নামে যেমন পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, একইভাবে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে চলছে পাহাড়িদের বিতাড়নের পাঁয়তারা। পাহাড়ি অধ্যুষিত এই সাজেকের মানুষের জন্য যেখানে দরকার শিক্ষা-চিকিৎসার সুবিধা, সেখানে মসজিদ নির্মাণ করে ইসলামীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

উপরোক্ত যেসব অভিযোগ ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা করেছে তার বিন্দুমাত্র সত্যতা ও অস্তিত্ব নেই। এটা তাদের মনগড়া বক্তব্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে অস্থিরতা করার চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি দখলের মতো ঘটনা নেই এবং উপজাতিদের ইসলামীকরণ এর মতো ঘটনা নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে- এখানে বাঙ্গালী ভূমিতে বৌদ্ধ বিহার স্থাপন করে বিভিন্ন মাধ্যমে দখল করা হচ্ছে এবং খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এই সত্য বিষয়টি ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা এড়িয়ে যাচ্ছে! সমাবেশে যেসব ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্র, বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। যাতে ভবিষ্যতে এধরণের মিথ্যাচার রটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত করার মতো দুঃসাহস প্রদর্শন না করে।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ২৩৯ সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে এবং চুক্তির অধিকাংশ ধারা-উপধারা বাস্তবায়ন করেছে ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে৷ পক্ষান্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ জেএসএস সন্তু চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিদ্যমান। এবং জেএসএস ভেঙে নতুন করে ইউপিডিএফ নামের সন্ত্রাসী সংগঠন যাত্রা শুরু করে। সন্ত্রাসী সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা প্রদানসহ এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করেছে। সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদাবাজি ও খুন-গুমে সাধারণ পার্বত্যবাসী অতিষ্ঠ। সর্বদিকে একটাই দাবি যে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সেনা অভিযান জোরদার করা এবং প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প পুন:স্থাপন করা।

সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা নিয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অতিবিলম্বে সেনাক্যাম্প পুন:স্থাপন করতে হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More