সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পাহাড়ি উপত্যকার মানুষ।

0

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত। আয়তনে বাংলাদেশের এক দশমাংশ। প্রাকৃতিক ও পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল যেনো চাঁদাবাজির এক স্বর্গ রাজ্য। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অব্যাহত চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্র। এমন সব অস্ত্র রয়েছে যা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছেও নেই! চাঁদাবাজি টাকা দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে কেনা হয়েছে এসব ভয়ঙ্কর অস্ত্র। এ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মোকাবিলা করা নেই স্থানীয় পার্বত্য নীতি। ১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি শর্ত মোতাবেক অত্রাঞ্চল থেকে ২৩৯-টি সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি বেড়েছে। সেনা ক্যাম্পের পরিত্যক্ত সরকারি খাস জায়গাগুলো দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়। ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণে বরাদ্দ আসছে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনাগুলো থাইল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুর ও চীনের চেয়ে উন্নত মানে নির্মাণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে পার্বত্য মুসলিম সম্প্রদায়ের উপাসনালয় জরাজীর্ণ। এই থেকে অনুয়েম যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতা এবং বৈষম্য-অনিয়ম চরমমাত্রায় পৌছেছে।

ব্যাঙের ছাতার মত গর্জে ওঠা উপজাতি সংগঠন গুলো চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে শক্তিসঞ্চার করে আজ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ৪/৫ টি উপজাতি সংগঠন বাৎসরিক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেই কমপক্ষে ১৫০০ কোটি টাকা সমপরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করছে। চাঁদাবাজির বিপুল এই টাকা নিজেদের বেতন-ভাতা, ভারী অস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও কূটনীতিক লগিং এবং কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের বিলাসবহুল জীবনে ব্যয় হয়। সন্ত্রাসীরা শুধু এসব করে থেমে নেই। গোপনে গ্রহণ করেছে গেরিলা প্রশিক্ষণ। বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাজ্য স্বীকৃতি দাবিসহ তার অন্তরালে রাষ্ট্র গঠন করার নীলনকশায় মেতে আছে। তারজন্য মজবুত করছে ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং আন্তর্জাতিক মহলে কূটনীতিক তৎপরতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের জুম্মল্যান্ড এবং কুকি ল্যান্ড গঠন করার প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি উপত্যকায় পাহাড়ি- বাঙ্গালী মিলে প্রায়ই ১৬ লক্ষ মানুষ চাঁদাবাজির শিকার। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর দাবিকৃত চাঁদা দিতে কেউ ব্যর্থ হলে অপহরণ পূর্বক হত্যা করা হয়। এবং নারীদের গণধর্ষণ পূর্বক হত্যা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝেমধ্যে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি গণমাধ্যমে ওঠে আসে সে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মূল কারণ হলো- চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপ রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াকে নিয়ে। এই লড়াইয়ে সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও হতাহত হয়। যদিও এই প্রকৃত ঘটনার কারণ হলুদ মিডিয়া কখনো তুলে ধরে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির প্রধান উৎস গুলো হলো- ১. অবৈধ কাঠ, ২. বাঁশ. ৩. সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বরাদ্দ ৪. গণচাঁদা. ৫. সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবিদের এককালীন চাঁদা ৬. নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় ৭. কাপ্তাই নদীতে মৎস্য আহরণ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় উপত্যকায় হরহামেশাই চাঁদাবাজি হচ্ছে। প্রকাশ্য-গোপনে চলা চাঁদাবাজির খবর প্রশাসন থেকে সকলেই জানে। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ। তাই সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। নীরবে চাঁদার টাকা সন্ত্রাসীদের ডেরায় পৌছে দিচ্ছে। কেউ যদি এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার মৃত্যু অবধারিত। মানুষ এতটা অতিষ্ঠ এবং এতটাই নির্যাতন- নিপীড়নের শিকার তা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ না করলে বিশ্বাস করা কঠিন।

আমরা পরিশেষে সরকারের কাছে দাবি জানাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা এবং জনগণের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনর্বহাল করা হোক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More