পশ্চিম পাকিস্তানের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করায় ভারতের চাকমাদের কালো দিবস পালন!

0

পার্বত্য চট্টগ্রামকে পশ্চিম পাকিস্তানের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করায় ভারতের চাকমাদের কালো দিবস পালন!

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় চাকমাদের সবাই মনে করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যায় তখন বৌদ্ধ ধর্ম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। কারণ সেই সময় স্নেহ কুমার চাকমাসহ অন্যান্য নেতারা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সাথে সাক্ষাত করলে নেহেরু চাকমা নেতাদের আশ্বস্ত করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তজ্জন্যে স্নেহ কুমারের নেতৃত্বে ১৫ই আগস্টের দিন রাঙ্গামাটিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এবং বান্দরবানে মায়ানমারের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৭ই আগস্ট রেডিওর মাধ্যমে জানতে পারা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকদের গাদ্দার তকমা দেয়, কেননা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়েও ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হল। চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় নিজের সিংহাসন টিকাতে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে অমৃত পাকিস্তানের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাঞ্চনপুরে ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ও চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র উদ্যোগে এবারেও ১৭ আগস্ট দিনকে ‘চাকমা কালো দিবস’ অভিহিত করে ঐদিন শাক্য সদক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অনিরুদ্ধ চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুবল কুমার চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা, চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, কাঞ্চনপুর শাখার সভাপতি ক্রিতম চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনে অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, “আজকের দিনটা সর্বভারতের চাকমা এবং ভারতের বাইরেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, যেখানে যেখানে চাকমা আছে তাদের সকলের জন্য কালো দিবস হিসেবে পালন করছি। আমরা ২০১৬ থেকে এই কালো দিবসটি পালন করে আসছি।”

পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা এবং ভারতের চাকমারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালে দেশ সদস্য স্বাধীন হওয়ার পর চাকমাদের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা প্রকাশ এম.এন লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) গঠন করা হয়। ১৯৭২ সালে পিসিজেএসএস এর সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী প্রকাশ্যে আসে। তারা ১৯৭৫ সালের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বাহিনী এবং বন বিভাগসহ রাস্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা শুরু করে। এম.এন লারমা নিহত হওয়ার পর তারিই আপন ছোটভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমা প্রকাশ সন্তু লারমা নির্বিচারে বাঙ্গালী ও রাষ্ট্র বাহিনীর উপর হামলা শুরু করে। এই হামলায় ৩৫ হাজার বাঙ্গালী নিহত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ উপজাতিরাও প্রাণ হারান। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামক’ একট চুক্তি জেএসএস সন্তু লারমার সঙ্গে সম্পাদিত করেন। চুক্তিতে উপজাতিদের দাবিদাওয়া আদায় হয়েছে। এই চুক্তির পরও চাকমাদের বাংলাদেশ বিরোধিতা কমেনি। এবং পরবর্তীতে চাকমাদের একটি অংশ প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে জেএসএস-এর একটি অংশকে নিয়ে স্বায়ত্তশাসন দাবি রেখে ‘ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ) গঠন করে। চাকমা বিচ্ছিন্নবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আরো দল-উপদল সৃষ্টি হয়েছে। চাকমা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দেখাদেখি মারমাদের ‘মগ লিবারেশন পাটি’ (এমএলপি) গঠন হয়েছে এবং কুকি জনগোষ্ঠী পক্ষ হইতে ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ)-এর মত সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলাকে নিয়ে কুকিল্যান্ড গঠন জন্য গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীল তৈরি করেছে।

বর্তমানে উপজাতিদের বাংলাদেশ বিরোধী বৈরিতা এবং ভারতীয় ত্রিপুরা ও চাকমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে কালো দিবস পালন পরিষ্কার করে যে, এই উপজাতিদের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যতই সুযোগ-সুবিধা প্রদান করুক তারা বাংলাদেশ ভেঙে স্বাধীন রাষ্ট্র সহ ভারতের সঙ্গে থাকতে চায়!

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More