পার্বত্য মেলায়ও পার্বত্য বাঙ্গালীদের সঙ্গে বৈষম্য।

0

রাজধানীর ঢাকার বুকে একখানা পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘পার্বত্য কমপ্লেক্স’। ঢাকা অনুষ্ঠিত পার্বত্য মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগোষ্ঠী হিসেবে শুধুমাত্র উপজাতীয় সম্প্রদায়ের একক আধিপত্য বজায় রয়েছে। গত বুধবার এ মেলার উদ্বোধন করা হয়, চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। কমপ্লেক্সের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘পার্বত্য মেলা-২০২৪’–এর উদ্বোধন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশ ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ মেলার আয়োজন প্রতি বছর করে থাকে। তারই ন্যায় এবারও মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

মেলায় অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং স্টল বরাদ্দসহ সবকিছুতে এককভাবে উপজাতিদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। মেলায় স্থান পেয়েছে উপজাতীয়দের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও কুষ্টিকালচার। বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতি ছাড়া আর কোন জাতি নেই এমনই পরিচিতি মেলায় স্থান পাচ্ছে। মেলার নাম স্বতন্ত্র ‘পার্বত্য মেলা’ হলেও পরিচালক, অতিথি, স্টল বরাদ্দ এবং কার্যক্রম সব উপজাতি কর্তৃক। মেলায় স্থানীয় পার্বত্য বাঙ্গালী নেতৃত্বশ্রেণী এবং পার্বত্য বাঙ্গালীদের মধ্য হতে কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি৷ মেলার স্টলগুলোর মালিক সব উপজাতিরা। পার্বত্য বাঙ্গালীদের মধ্য হইতে স্টল বরাদ্দ চেয়েও পায়নি। বিগত কয়েকবছর ধরে বাঙ্গালীদের মেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়না। বাঙ্গালীদের নানাভাবে বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করা হয়। বিগত বছরগুলোর ইতিহাস যদি আমরা ঘেটে দেখি, সাবেক জনৈক ছাত্রনেতা ২০১৭-২০১৮ সালে বিভিন্নভাবে তদবির করে মেলায় একটি স্টল বরাদ্দ নেন। পরবর্তীতে স্টলটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাকেসহ বাঙ্গালীদের হয়রানি করা হয়। এরপর থেকে পার্বত্য বাঙ্গালীরা মেলায় বাঙ্গালীদের অংশ গ্রহণে বাধা-বিপত্তি এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ তুলে আসছেন।

পার্বত্য মেলায় বিশেষভাবে সাম্প্রদায়িকতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে পার্বত্য বাঙ্গালীদের সঙ্গে। দেশবাসীসহ বহির্বিশের কাছে উপজাতি নেতৃত্বশ্রেণী পরিচয় করাতে চাচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতিদের, এখানে উপজাতি ব্যতিত আর কারো বসবাস নেই৷ অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী। পরিতাপের বিষয় এই মেলায় বাঙ্গালী কোন অস্তিত্ব রাখা হয়নি। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙ্গালী বিহীন উপজাতি অঞ্চল হিসেবে চিনতেছে। এরফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের পরিচয় সংকট তৈরি হবে।

মেলায় উপজাতিদের উন্নত জীবনযাপন লক্ষণীয় ছিলো। কোনভাবেই মনে হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা পিছিয়ে। উপজাতিদের অত্যাধুনিক সাজ সজ্জা ও প্রদর্শনী বলে দেয় তাদের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে৷ এখন আর তারা অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না যে তারা পিছিয়ে এবং তাদের কোটা দরকার। তাদের জীবনাচার দেখে স্পষ্ট সরকারি সুযোগ-সুবিধা তারা পেয়ে চালকের আসনে অবতীর্ণ।

মেলায় পার্বত্য বাঙ্গালীদের অনুপস্থিতি পার্বত্য বাঙ্গালীদের ভবিষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিক হিসেবে পরিচিত মুছে ফেলবে বলে পার্বত্য বাঙ্গালীরা মনে করেন। একটি মেলার লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে সম্প্রীতি ও অসম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে যাতে সেতুবন্ধন তৈরি হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালি কে বাদ দিয়ে পাহাড়ে শান্তি বা সম্প্রীতি স্থাপন কী সম্ভব? যদি শান্তি সম্ভব হয় তাহলে মেলায় বাঙ্গালীদের অনুপস্থিতি কিছু যায় আসেনা আর যদি শান্তি সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই মেলায় বাঙ্গালীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কর্তব্য ছিলো।

মেলায় তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁতে বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার মেলার আকর্ষণকে বাড়িয়েছে ঠিক কিন্তু সর্বত্র গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এই মেলা। যদি পার্বত্য মেলায় বাঙ্গালীদের অংশ গ্রহণ থাকতো তাহলে অবশ্যই মেলার আকর্ষণ বা সৌন্দর্য অধিকতর বেড়ে যেতো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More