জনশ্রুতি আছে কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের পৃষ্ঠপোষকতা ছিলেন সন্তু লারমা!

0

কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলাকে নিয়ে স্বশাসন বা স্বায়ত্তশাসন (কুকি ল্যাণ্ড) গঠন দাবি রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের আবির্ভাব জানান দিয়ে প্রকাশ্যে আসলেও পর্যাক্রমে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, পর্যটকের উপর হামলা, এবং ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্রলুটসহ রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে বর্তমানে এক আলোচিত-সমালোচিত নাম। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাথান বম সম্পর্কে-

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এবং আদি সংগঠন কেএনডি’র সভাপতি হচ্ছেন- নাথানা লনচেও প্রকাশ নাথান বম। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২ নং রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেন পাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেও (জুমচাষী) এর পুত্র হচ্ছেন এই নাথান বম (৪৬)। তার মাতা মৃত রৌকিল বম, ছিলেন একজন গৃহিনী। একটি হতদরিদ্র পরিবার থেকে তার উঠে আসা বলা যায়। ৫ ভাই ও ১ বোন এর মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ ভাই। ছাত্রজীবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রুপের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) যোগ দেওয়ার কারণে নাথান বম এর পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় সন্তু লারমা। তার সুবাদে তিনি পড়াশোনা করেছেন- বিএ অনার্স, এম এ চারুকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এইচএসসি করেছেন-১৯৯৫ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো ঢাকা কলেজ।
এসএসসি পাস করেন-১৯৯৩ সালে শিক্ষা বোর্ড ছিল চট্টগ্রাম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বান্দরবান দন বক্স উচ্চবিদ্যালয়। এছাড়াও তিনি লন্ডন থেকে আর্কিটেকচার বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী ধারী বলে জানা যায়। স্থানীয় অধিবাসীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নাথান বমরা ছিলেন দিনে এনে দিনে খাওয়ার মত পরিবার। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তার বাবার পাশাপাশি ভাইকেও জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছিলো৷ তার বড়ভাই জোয়াম লিয়ান বম (৬২) ছিলেন পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। রুমা বিদ্যুৎ বিভাগের অস্থায়ী কর্মচারি নামেও পরিচিত। চতুর্থ ভাই রপুই বম পেশায় জুম চাষী হলেও সে কেএনএফ সদস্য বলে জানা যায়। নাথান বমদের পরিবার অনেক বড়। পরিবারের এতো সদস্যের আহার যোগাতে নাথান বমকেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছিল। একসময় সেনাবাহিনীর জোন, বিগ্রেডে সাহায্যে জন্য হাত পেতে থাকত। মানবিক বিবেচনায় সেনাবাহিনী তাকে চাল, ডাল এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য কাপড়চোপড় ও উপহার সামগ্রী দিতেন। সৌজন্য সাক্ষাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে নাথান বম ছবি তুলতেন৷ এসব ছবিকে জেএসএস সন্তু ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপ পুঁজি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে। বস্তুরঃ সন্তু লারমা নাথান বমের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার পর এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পিসিপি’তে সক্রিয়ভাবে যোগদান করার পর তার জীবন এবং তার পরিবারের জীবনধারা পরিবর্তন হয়ে যায়৷ পরিবারের অনেক সদস্য সরকারি চাকরি পায় এবং নিজের স্ত্রী লাল সমকিম বম রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স ও একটি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর পাশাপাশি তার দুইটি শিশু সন্তান রয়েছে-
১. স্কেলার বম (৭) (শিশু শ্রেণি, রুমা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।
২. স্কেন্দি বম (৪)।
কথিত আছে বর্তমানে তার স্ত্রী ও সন্তানাদি সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমনটা বলা হলেও গোপনে যোগাযোগ রয়েছে। তার স্ত্রীর ভাষা- ব্যবহার উগ্র এবং স্বামীর বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন দেওয়ার মত। স্বামী জাতির অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে বরাবরই নাথান বমের স্ত্রীর বক্তব্য ছিল এমন। একজন দেশদ্রোহীর স্ত্রী কীভাবে সরকারি চাকরিতে বহাল থাকে তা বোধগম্য নয়। ইডেন পাড়ায় নাথান পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি বিলাসবহুল ভবন তৈরি করছেন। সন্তু লারমা অর্থ সহযোগীতা ও জঙ্গি কাজে লিপ্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ নাথান বমকে উচ্চবিলাসী করে এবং বেপরোয়া জীবন থেকে সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরির মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে ধাবিত করে। সূত্রের তথ্য মতে জানা যায়, বৈদেশিক দাতাসংস্থা, খ্রিস্টান মিশনারী ও এনজিও এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নাথান বম বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ গঠন করতে সক্ষম হয়। মিজোরাম সে একাধিক বাড়ি তৈরি করেছে বলে বাস্তব প্রমাণ মেলে।

নাথান বম এর কর্মজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল সবসময় উশৃংখল স্বভাবের।

১. স্কুল জীবন থেকে পিসিপি রাজনীতির প্রতি দূর্বল ছিলেন।

২. ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন কালে ঢাকা মহানগর পিসিপি শাখার সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে কেন্দ্রীয় পিসিপির অন্যতম সক্রিয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা যায়।

৩. তিনি সন্তুলারমার খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। সন্তু লারমার নির্দেশে জেএসএস ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠন পিসিপি সংগঠন থেকে তার পড়াশোনার খরচের যোগান দেওয়া হতো বলে জানা যায়। এসময় তিনি সন্তু লারমার আদর্শে দিনে দিনে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মনোভাব পোষণ করে গড়ে উঠে৷ তার মধ্যে লালন ও সৃষ্টি হয় বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর প্রতিহিংসা ও বিরূপ ধারণা ও ঘৃণার মনোভাব।

৪. তিনি চারুকলা বিষয়ে ডিগ্রীধারী হিসেবে খাগড়াছড়ি জেলার চেঙ্গী স্কোয়ারের পাশে নির্মিত তথাকথিত জুম্ম জাতির পিতা এম এন লারমার ভাস্কার্যটি (মুরাল) তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন। একাজের জন্য তিনি পিসিজেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা তাকে ভূয়সি প্রশংসা করেন বলে জানা যায় এবং তাকে এ পর্যায়ে আসতে ভূমিকা পালন করেছেন। তৎকালীন একাজের পারিশ্রমিক ও সম্মান হিসেবে সন্তু লারমা নাথান বমকে কোটি টাকা পুরষ্কৃত করেন। যার কারণে নাথান বম এর পৃষ্ঠপোষক বলা হয় সন্তু লারমাকে।

৫.কেএনডি গঠন-
জানা যায়, আনুমানিক ২০০৮ সালে তিনি নিজস্ব বম জাতিসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্বার উন্নয়ন কল্পে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করেন।
এ প্রেক্ষাপটে তিনি নিজেকে সভাপতি করে রুমা উপজেলা সদরে কেএনডি ও কুকি- চিন ন্যাশনাল ডেভলোপমেন্ট অরগানাইজেশন) নামে সমাজ কল্যানণমুলক একটি সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।পরবর্তীতে, গত ২৮ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে রুমা উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন নামে রেজিসট্রেশন করা হয়, যার নিবন্ধন ২৬৬/২০১৫ বলে জানা যায়।

৬. কেএনএফ গঠন-
উক্ত সংগঠনটির খোলসের আঁড়ালে ২০১৭ সালে নাথান বম নিজকে সভাপতি করে ধীরে ধীরে কেএনএফ নামে একটি সশস্ত্র দল/ সংগঠন গঠন করেন। এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী অঞ্চল সমূহে (অন্ততঃ ১১ টি উপজেলা) নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র/ জৌ- ল্যান্ড গঠন করা।

৭. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ-
নাথান বম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্বার (অন্ততঃ ৬ টি উপজাতি) প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৮ সালে বান্দরবান সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বান্দরবান জেলা নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। কিন্তু জমাকৃত ডকুমেন্টস ত্রুটি পূর্ণ হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন পত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিল ঘোষণা করা হয় বলে জানা যায়।

৮. বর্তমান অবস্থান-
স্থানীয় সুত্রে নাথান বম এর সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। তিনি প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করেন। তিনি প্রায়ই লন্ডনসহ ইউরোপিয়ান অনেক দেশ ভ্রমনে যান।
তিনি একাধিক বার রুমা / বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী কেএনএফ এর গোপন আস্তানায় অবস্থান করেছেন বলেও জানা যায়।

৯. তিনি সুদানে দ্বৈত – নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।

১০. জু্ম লেখক হিসেবে পরিচিতি ছিল।

তিনি নিজ কে জৌ -জাতির লেখক/ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে বেশী পছন্দ করেন। জৌ -জাতিকে নিয়ে একাধিক বইও রচনা করেছেন।তাঁর লেখা বমজৌ নামের বইটি অন্যতম প্রসিদ্ধ বই বলে জানা যায়।

কেএনএফ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাথান বম হতদরিদ্র থেকে উচ্চভিলাসী ও বিলাস বহুল জীবনের কথা-

নাথান বম বর্তমান সময়ের কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সংক্ষেপে কেএনএফ সবচেয়ে আলোচিত একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী নেতা। সেই বম সম্প্রদায়ের উগ্র যুবক এবং ভারতের মিজোরাম ও মায়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের দলছুট সদস্য ও নেতাকর্মীদের দিয়ে কেএনএফ গঠন করেন।

কেএনএফ সম্পর্কে জানা যায়- সর্বপ্রথম ফেসবুকে তারা একটি পেইজ খুলেন। সে পেইজ থেকে তারা দাবি করছেন রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। জাতিগুলো হলো- বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা একাধিক বিবৃতিতে এই সংগঠন জানায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছে তারা। তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম। তাদের দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় কুকি-চিন রাজ্য ছিলো৷ চাকমারা তাদের সে রাজ্য দখল করে তাদের উচ্ছেদ করেছে। সে রাজ্য পুনরুদ্ধার এবং স্বাধীন কুকি- চিন রাজ্যের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছে বান্দরবান জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি নিয়ে। তাদের আরো দাবি, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমান বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। চলতি বছর তারা আত্মগোপনে যায়। যদিও তারা বলে আসছেন তারা ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সূত্র ও তাদের কার্যক্রম বিবেচনায় তাদের এই দাবির পক্ষে সত্যতা নেই। কারণ তৎকালীন তাদের সশস্ত্র শাখার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র ভিডিও প্রচার এবং কুকি-চিন রাজ্য গঠন করার দাবির পর সেনাবাহিনী তথা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে তারা। এর পর তাদের বিরুদ্ধে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ উঠে। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা কেএনএফ’র বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশনে নামে। অপারেশনে ৩ কেএনএফ সশস্ত্র সদস্য ও ৭ জঙ্গীসহ সর্বমোট ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দাবি করা হয় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে চোরাগোপ্তা হামলা করে তারা ৪ সেনাসদস্যকে হত্যাসহ অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যার পাশাপাশি রক্তাক্ত করে। ধারণা করা হয়েছিল অপারেশনের একপর্যায়ে কেএনএফ কোণঠাসা হয়ে যায়, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়; তাদের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায়; পালিয়ে যায় সংগঠনের সভাপতি নাথান বম। কিন্তু এই দাবি ভুল প্রমাণিত হয় তাদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর এবং শান্তি কমিটির সাথে কেএনএফ সদস্যদের স্বশরীরে দুই দফায় বৈঠকের পরও রুমা ও থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্রলুট করার ঘটনায়। বর্তমানে জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। এই তিনটি উপজেলা তাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তারা সামনে না আসলেও হুংকার দিচ্ছে।

তাদের সাহস দেখানোর কারণ কী?
কেএনএফ বম সম্প্রদায়ের উগ্র যুবক ও মায়ানমারের কাচিন, ভারতের মিজোরাম এর বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের দলছুট সশস্ত্র সদস্য ও নেতাকর্মীদের দিয়ে গঠন হয়। তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ দুইটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলো। প্রশিক্ষণ দেয় কাচিন বিদ্রোহীরা। প্রায় তাদের হাজারের উপর সশস্ত্র সদস্য থাকার কথা শোনা যায়। যদিও তার বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ নেই। ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্রলুটের ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের কারণে তারা বান্দরবান জেলার গহীন অরণ্যকে প্রাথমিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। সেসাথে মিজোরাম ও কাচিন, চিন রাজ্য হচ্ছে তাদের বিকল্প আশ্রয়স্থল। একাধিক সূত্রের তথ্য হচ্ছে, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটি গহীন অরণ্য এবং ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকাকে আশ্রয়স্থল হিসেবে পা বাড়াচ্ছে। নেতৃত্বদাতা নাথান বম ভারতের মিজোরাম থাকা স্বগোত্রীয় জাতি ভাইদের কাছে আশ্রয়ে আছে বলে জানা যায়৷ মূলত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের হাতে পাচ্ছে না। এছাড়াও ভৌগোলিক কৌশলগত কারণে কেএনএফ পাহাড়ে জঙ্গলে পালিয়ে থাকছে পারছে। তাই তারা অভিযানের বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছে; সাহস দেখাতে পারছে।

আজকে এই লম্বা আলোচনার নাথান বম সৃষ্টির পেছনে ছিলো জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা এবং বৈদেশিক কতিপয় দাতাসংস্থা, এনজিও, খ্রিস্টান মিশনারীরা। জেএসএস সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৩ টি উপজাতি জনগোষ্ঠীর কর্ণধার পরিচয় বহন করে ১৯৯৭ সালের ২-রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত করে সরকারের সঙ্গে। এই চুক্তির আওতায় সবধরনের সুযোগ-সুবিধা জেএসএস সন্তু লারমা গংরা ভোগ করে৷ সরকার জেএসএসকে ১৩ টি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ৯৯টি ধারা-উপধারায় সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে৷ উপজাতি ১% এরও কম জনসংখ্যার জন্য এই সুবিধা বলা যায় অনেক। তারপরও জেএসএস সন্তু সমবন্টন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কুকি-চিন ভুক্ত বম জনগোষ্ঠীর কেএনএফ বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপ চুক্তির সুযোগ-সুবিধা একতরফাভাবে চাকমাদের দিলেও কুকি-চিন ভুক্ত ৬টি জনগোষ্ঠীকে দিচ্ছে না। তারজন্য তারা অধিকার এবং আলাদা কুকি ল্যাণ্ড গঠনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে। মূলত জেএসএস পিসিপি করার জন্য সন্তু লারমা একসময় যে অর্থের যোগান দিয়েছে সে অর্থ দিয়ে নাথান বম কেএনএফ গঠন করেছে। নাথান বম তথা তার কেএনএফ এর সঙ্গে বিরোধ রয়েছে চাকমাদের। পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি ও চাকমা ঐতিহাসিক বিরোধ রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই বিরোধ বিদ্যমান। কেএনএফ এর দাবিদাওয়া ও সংগ্রাম হওয়া উচিত জেএসএস সন্তু এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেএনএফ তা না করে অস্ত্র ধরেছে রাষ্ট্র ও বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে। কেএনএফ এর এই দেশদ্রোহীতা ও বৈরী আচরণ ক্ষমার অযোগ্য। সরকার কেএনএফ কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে শান্তি কমিটি গঠন করে। তাদের দাবিদাওয়া সরকার বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা চলমান রেখেছে। এমতাবস্থায় তারা ব্যাংক ডাকাতি ও পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্রলুট করেছে! তাদের এই কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের সঙ্গে চরম ধৃষ্টতার সামিল।

সংশ্লিষ্টরা কেএনএফ এর শক্তিসামর্থ্য প্রকাশ না করলেও বিগত বছরের কর্মকাণ্ড বলে দেয় তারা যথেষ্ট পাকাপোক্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবাদের বাস্তব চিত্র রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছাচ্ছে না। যার কারণে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বরাবরই ব্যার্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কুকি-চিন ভুক্ত বম জনগোষ্ঠী সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু তাদের শক্তি সঞ্চয় ও কূটনীতিক শক্তির পেছনে রয়েছে অনেক বড় শক্তি। কেএনএফ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তাই তাদেরকে সামনে পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর সহযোগীতা নিঃসন্দেহে আছে এবং প্রতিবেশী দেশ দুইটিতে থাকা তাদের স্বগোত্রীয় সমর্থন আশ্রয়-প্রশ্রয় তো আছেই। সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো- কুকিরা একটি যুদ্ধবাজ, দাঙ্গাবাজ ও বৈরী আচরণকারী গোষ্ঠী এবং হানাহানি, সংঘর্ষ ও জাতিগত ভেদাভেদ তাদের শিরা-উপশিরায় আছে। তাদের যত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক না কেন, তারা চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি করবেই। তাদের অতীত ইতিহাস খুবই জঘন্য। ব্রিটিশদের অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারী হত্যা করে কুকিরা। কুকি দমনে ব্রিটিশরা হিল ম্যানুয়েলে বিভিন্ন আইন যুক্ত করেন। সবকিছু বিবেচনায় বলা যায়, রাষ্ট্র ও প্রশাসন যথাযথ কঠোর পদক্ষেপ এবং স্থায়ী পার্বত্য নীতি গ্রহণ ছাড়া কেএনএফ নির্মূল করতে পারবে না; সন্ত্রাসী প্রবণতা দেখা যায় এমন এলাকায় সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করা। কেএনএফ’র সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রেখে জেএসএস এর চুক্তির আওতায় তাদের আনা যায় কীনা সেটা বিবেচনা করা উচিত। তাদের দাবিদাওয়া অনুযায়ী একটি অঞ্চলে দুইটি চুক্তি সম্ভব নয়। এমন হলে অন্যান্য উপজাতি গুলোও পরবর্তীতে আলাদা আলাদা দাবি করে চুক্তিতে পৌছাতে সশস্ত্র সংগ্রাম করবে। তাই কেএনএফ কে জেএসএস এর চুক্তিতে আনতে বাধ্য করতে হবে। কেএনএফ যদি এটা না মানে তাহলে তাদেরকে সহজে চেপে ধরার যে সুযোগ টি আছে সেটি হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে থাকা সীমান্তবর্তী দেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বন্ধ করা এবং সীমান্তে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেএনএফ কে অস্ত্র, রসদ সংগ্রহসহ দেশগুলোকে অবাধে যাতায়াত বন্ধ করা। একটি সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন কে বশে আনতে বা দূর্বল করতে কিংবা ঘিরে ফেলতে এটি হতে পারে আদর্শ কার্যকারী পদক্ষেপ।

লেখক: তালহা জোবায়ের, বান্দরবান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More