পাহাড়ের উপজাতিরা অন্যসব জেলার মানুষের চেয়ে অনেক উন্নতভাবে জীবন যাপন করছে।

0

পার্বত্য চট্টগ্রামে সমতল থেকে ভ্রমণে আসা বাংগালী “জাবেদ নোমানী” বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন হিল নিউজ বিডি ডটকম’কে

দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় ভ্রমণ নিয়ে লিখব লিখব বলে ভাবছিলাম। অবশেষে আজকে এই বিষয়টি নিয়ে লিখতে বসলাম। আমার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে। আমার এলাকাতে রাঙ্গামাটির একজন চাকমা বন্ধু আছে। এনজিওতে চাকরি করে। তার নাম নিশান চাকমা (নিরুপম চাকমা।) চাকরির সুবাদে সে রাঙ্গামাটি থেকে ময়মনসিংহ এসেছে। একদিন এক হতদরিদ্র সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে বর্থ্য হয়েছে। এ নিয়ে নিশান চাকমা ও হতদরিদ্র তর্কাতর্কি শুরু হয়। দু’জন লেগে যায়, একে অপরকে আঘাত করে। ঘটনাটি আমার দৃশ্য গোচর হলে দু’জনের মধ্যে মিটমাট করে দিই যাতে পরবর্তীতে এধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে। কথা বলতে বলতে নিশান চাকমার সাথে পরিচয় হলো। আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে রাখলো সেই। কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে আমার ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর দু’জন দু’জনের মধ্যে কত কথা, কত কিছু শেয়ার করা হয়েছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ এবং পাহাড় সম্পর্কে জানার প্রবল ইচ্ছা আমার অনেক আগে থেকেই। একটা আগ্রহ ছিলো সবসময়ই। তাকে কাছে পেয়ে তার থেকে অনেক জানা অজানা তথ্য জানলাম। তার কথা শুনে মনে হলো পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতিরা আসলেই সেখানে বাঙ্গালীদের দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত। বাঙ্গালীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদের ভূমি দখল করছে, তাদের মা-বোনদের সেনাবাহিনী-বাংগালী মিলে ধর্ষণ করছে। তার কথা শুনে আমার করুণা হলো সেইখানকার উপজাতিদের জন্য। কারণ কিছুদিন পরপর বিভিন্ন মিডিয়াতেও দেখতাম সেখানকার সেনা-বাঙ্গালীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তা দেখে আমিও সত্য মনে করতাম। মনে মনে সেখানকার বাঙ্গালীদের ওপর আমার ঘৃনা জন্ম হলো। আর গর্ববোধের সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিষাদে ভরে যেতাম।

যাই হোক বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যাটন শিল্প ও প্রাকৃতির নিদর্শন ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনমান, কালচার, জীবনযাপন দেখতে আমার চাকমা বন্ধুর সাথে পাহাড় ভ্রমনের উদ্যেশ্যে ময়মনসিংহ থেকে রাংগামাটি পার্বত্য জেলার পথে রওয়ানা হলাম। কিন্তু পাহাড়ের মাটিতে পা রেখে বাস্তবে যা দেখলাম তা সব উল্টো। আমাকে কেন আমার চাকমা বন্ধু নিয়ে এসেছে সেবিষয়েও পিসিবি নামের সংগঠন জানতে চেয়েছে তার থেকে। এ নিয়ে পিসিপি তাকে অনেক জেরা করেছে। যেটা লিখে আপনাদেরকে বুঝানো যাবেনা। সেখানে গিয়ে বুঝলাম যে, কারা বৈষম্য এবং নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে দেখলাম যে পাহাড়ের উপজাতিরা বাংলাদেশের অন্যসব জেলার মানুষের চেয়ে অনেক উন্নতভাবে জীবন যাপন করছে। শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসায়-বানিজ্যে সর্বক্ষেত্রে তারা বাঙ্গালীর চেয়ে বহুগুনে প্রতিষ্ঠিত এবং অগ্রগামী। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের মধ্যে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সেনা অফিসার, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত রয়েছে। বিপরীত দিকে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালীরা শতগুনে পিছিয়ে আছে। লক্ষ করে দেখলাম যে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ম শ্রেণী পাস বেকার একজন উপজাতীয় যুবকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ, বিপরীত দিকে একই অঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার বাঙ্গালী যুবক বেকার হয়ে দেশ ও অর্থনীতির বোঝা হয়ে রয়েছে। অগ্রাধিকারের নামে একচেটিয়া উপজাতীয় অদক্ষ যুবক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হচ্ছে বাঙ্গালী শিক্ষিত যুবকেরা। শুধু তাই নয়, যত দূর যাই ততই দেখি অত্র অঞ্চলে উপজাতিরা সংঘাত, সংঘর্ষ, বাঙ্গালী নিধন ও চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাচ্ছে।

আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কি রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে উপজাতি সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দলের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে প্রায় প্রতিদিনই নিরীহ লোকজন খুন হচ্ছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ মরণ খেলায় মেতে উঠেছে। বাঙ্গালী নিধন প্রশ্নে আবার তারা এক হয়ে কাজ করে। গত বছরের শীত মৌসুমে হানিফ পরিবহনে চড়ে রাজশাহী হতে পাহাড়ে ভ্রমণ করতে আসা একদল পর্যটকের উপর উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ চাঁদার জন্য খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের নানিয়ারচর এলাকায় গুলিবর্ষণ করে। গাড়ির চালক দক্ষ হওয়ার কারণে প্রাণে বেঁচে যায় পর্যটকবাহী ৩টি গাড়ি। তবে পাহাড়ে ভ্রমণে এসে একটা বিষয় বুঝতে পারলাম যে দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারছে না। আর কেন পারছেনা তাও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কাছে বিরাট এক প্রশ্ন??

পাহাড়ে প্রতিনিয়ত উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক খুন, গুম, অপহরণের কারনে ঐ অঞ্চলের নিরীহ উপজাতি এবং বাঙ্গালীরাকে সারাক্ষন আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। এইতো গত কিছুদিন আগেও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে চাঁদার জন্য তিন জন বাঙ্গালীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা, সেই অপহৃত ব্যক্তিদের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। বিগত কয়েক বছর আগেও খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে সাদিকুল ইসলাম নামে এক বাঙ্গালী যুবক ও রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে নয়ন নামে আরেক বাঙ্গালী যুবককে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় যখন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে মাঠে নামে এলাকাবাসী ঠিক তখনই ঐ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে উপজাতি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ঘরবাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দুঃখজনক হচ্ছে কিছু মিডিয়া খবর প্রচার করে বাঙ্গালীরাই হামলা করেছে। অথচ সঠিক চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। উপজাতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেরাই তাদের ঘরে আগুন দিয়েছে। তথাকথিত শান্তিবাহিনী নামে জানোয়ার গুলো এ যাবৎ প্রায় ৩০ হাজার নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে! কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। বছরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে প্রতিনিয়ত সেখানকার জনগনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।

এই অঞ্চলের পাহাড়ি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানে একচেটিয়া পাহাড়ি যুবকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), (ইউপিডিএফ) ও জেএসএস এম.এন সংস্কার ও তাদের অঙ্গ সংগঠন কতিপয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে চাকুরীরত পার্বত্য বাঙ্গালী কর্মকর্তা কর্মচারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একদিকে সরকারের তরফ থেকে দেয়া উপজাতি অগ্রাধিকার কোঠা, অন্যদিকে আঞ্চলিক পরিষদের চাপ, প্রয়োজনে তাদের অস্ত্রের ব্যবহারে চলছে প্রতিনিয়ত সুবিধা আদায়ের কৌশল
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণ করে আমার যে বাস্তব অভিজ্ঞতাটা হলো সেটা হলো আমরা সমতলের অন্যসব জেলার মানুষ মিডিয়া এবং এখানে চাকরি করতে আসা উপজাতিদের থেকে যা জানছি আসলে পাহাড়ে তার উল্টোটাই ঘটছে। একমাত্র তাদের মিথ্যা প্রচার প্রচারন কারনে সমতলের অন্য মানুষের মনে সেখানের বাঙ্গালীর প্রতি আমার মত ঘৃনা জন্ম নিচ্ছে।

যখনই পাহাড়ে ঘুরতে বেরিয়েছি তখনই মনের মধ্যে একটা চাপা আতংক ছিল না জানি কখন অপহরণ হতে হয়। তার কারন পাহাড়ে খুন, গুম অপহরণ এইগুলি নিত্যদিনের ঘটনা। এর আগেও পাহাড়ে বেড়াতে এসে অনেক পর্যটক পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের নিকট অপহরণের শিকার হয়েছিল। আমি একজন সমতলের বাসিন্দা হয়ে পাহাড়ের উপজাতি ভাইদের নিকট জানতে চাই– আপনারা স্বাধীন ভাবে যেভাবে বাংলাদেশের অন্যসব জেলাতে ঘুরে বেড়ান সেভাবে আমরা কেন অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে গিয়ে বেড়াতে পারবনা?? কেন আমাদেরকে জেএসএস-ইউপিডিএফ নামের পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপহরণ আর চাঁদাবাজির শিকার হতে হবে? পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশের বাহিরে নাকি যে সেখানে জেএসএস-ইউপিডিএফ এর অনুমতি নিয়ে আর চাঁদা দিয়ে বেড়াতে যেতে হবে? আমি সমতলের একজন বাসিন্দা হয়ে পাহাড়ের উপজাতি ভাইদের উদ্যেশ্যে একটা কথা বলতে চাই যে- আপনারা এক হয়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। সমতল থেকে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া কোন পর্যটকের ওপর আর যদি পাহাড়ি সন্ত্রাসী দল কর্তৃক ছিনতাই, অপহরণ এসব করা হয় তাহলে সমতলে বসবাসরত উপজাতিদেরকেও তার ফল ভোগ করতে হবে। সেই দিন আর বেশি দেরি নেয়। মনে রাখবেন, আমরা সমতলের মানুষেরা যদি স্বাধীনভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘুরতে যেতে না পারি তাহলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরাও ঢাকাসহ সারাদেশের সমতল জেলাগুলোতে থাকতে পারবে না। আর যদি পাহাড়ে কোন পর্যটকের উপর হামলা হয় তাহলে দেশের সমতলের যে কোন জেলাতেও পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না। তাই সময় থাকতে ‘সাধু সাবধান’।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More