ম্রোদের উচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটেনি: সিএইচটি কমিশনের বক্তব্য উদ্দেশ্যে প্রণোদিত মিথ্যাচার।

0

||কাজী তুষার ইকবাল||

গত ২ নভেম্বর ২০২০, আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) বান্দরবানের পার্বত্য জেলায় সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপ কর্তৃক আটটি গ্রামের কথিত আদিবাসী ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের মুখে ঠেলে দিয়ে ফাইভ-স্টার (পাঁচ তারকা) হোটেল নির্মাণের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে! পাশাপাশি অবিলম্বে উক্ত উন্নয়ন প্রকল্পটি বাতিল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো পর্যটন প্রকল্পের জন্য স্বাধীন ও পার্বত্য চুক্তির জেলা পরিষদ আইন মেনে পূর্বাবহিত সম্মতির ভিত্তিতে সমাজের জন্য অধিকতর উদ্বেগমুক্ত স্থান নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। সিএইচটি কমিশনের পক্ষে কমিশনের তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপাউলো ও মিরনা কানিংহাম কেইন কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ ও আহ্বান জানানো হয়!!

এই বানোয়াট মিথ্যাচার বিজ্ঞপ্তির পর সুযোগ সন্ধানী পার্বত্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। পাহাড়ের আনাচে কানাচে সেনাবাহিনী কর্তৃক পর্যাটনের নামে ভূমি দখল এবং কথিত আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে কুৎসা রটানো হচ্ছে। সেনা-বাংগালী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে সহজসরল উপজাতীয়দের। জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলো সহজসরল উপজাতীয়দের মিথ্যা গেলাচ্ছেন নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে। এসমস্ত কুৎসা রটিয়ে পাহাড়ের পরিবেশ অশান্ত করার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। সুনাম ধন্য সেনাবাহিনীকে দেশ-বিদেশে হেয় করে রাষ্ট্রের স্বার্বভৌমত্বে আঘাত হানছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্ত অনুসারে সেনাবাহিনী চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগী হয়ে কাজ করবে তা চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। পাহাড়ে সেনাবাহিনী কাজ করছে সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান্নোয়ন, চিকিৎসা সেবা সহ মানুষের জননিরাপত্তা নিশ্চিতে। যারাই প্রশ্ন তুলে পাহাড়ে সামরিক শাসন চলছে, তাদের বলবো আগে দৃষ্টিশক্তি মানসিক একপেশে চিন্তা বাদ দিয়ে সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল অবৈধ অস্ত্র পরিহার। জেএসএস কি অবৈধ অস্ত্র পরিহার করেছে?? জেএসএস যদি চুক্তির শর্ত লংঘন করে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে থাকতে পারে তাহলে সেনাবাহিনীও অপারেশন উত্তরণ নামে পাহাড়ে ৬ টি সেনানিবাসের বাহিরেও সেনা ছাউনি তৈরি করে থাকতে পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতার তাগিদে সেনাবাহিনী পাহাড়ে মোতায়েন থাকা বর্তমান চলমান সংকটে আবশ্যক।

দীর্ঘদিন ধরে “সিএইচটি কমিশন” পার্বত্য চট্টগ্রামের ইস্যুতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। উপজাতীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে বাঙ্গালী-সেনাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও, ২০০৮ সালের ৩১ মে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এক সম্মেলনে সিএইচটি কমিশন গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ১২ সদস্যের এই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হয় বিতর্কিত মানবাধিকার কর্মী ব্রিটিশ নাগরিক এরিক এভাব্যুরি, বাংলাদেশের সুলতানা কামাল ও ডেনমার্কের ড. আইডা নেকোলাইসেন। এরিক এবাব্যুরি ১৯৬২-১৯৭০ সালে পর্যন্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি এবং ১৯৭১ সাল থেকে ব্রিটিশ আইন সভার সদস্য রয়েছে এবং বর্তমানে সে এই সভার সভাপতি। সে পূর্ব-তিমুরকে (আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠন) বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনে কাজ করেছে। বর্তমানে সিএইচটি কমিশন উপজাতি সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা সহায়তাক হিসেবে এবং পার্বত্য থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্টের নির্লজ্জ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যার অন্যতম হোতা সুলতানা কামাল গংরা। ম্রোদের উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনী ও শিকদার গ্রুপ কর্তৃক ফাইভ-স্টার হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছে তা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত মিথ্যাচার। সেনাবাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী কাউকে উচ্ছেদ করে ফাইভ-স্টার হোটেল নির্মাণ করতে পারেনা। ম্রোদের উচ্ছেদের মতো ঘটনা উক্ত এলাকায় ঘটেনি। সিএইচটি কমিশনের কার্যক্রম বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ৷ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পাহাড়ের সেনাবাহিনী ও বাংগালী নিয়ে চরমভাবে নির্লজ্জ মিথ্যাচারে লিপ্ত সিএইচটি কমিশন। এই বিতর্কিত কমিশন ২০১৪ সালে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করতে উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করে। বক্তব্যে বলা হয় সেনাবাহিনী কথিত আদিবাসীদের ভূমি দখল করে বাংগালীদের পুর্নবাসন করে আসছে! কথিত আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে বাংগালীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে অগ্নিসংযোগ করে!! এই ধরণের কাল্পনিক অস্তিত্বহীন মিথ্যাচার করে তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে আমাদের প্রতিবাদের মুখে রাংগামাটি জেলা প্রশাসন জনপ্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সিএইচটি কমিশনের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনের ফলে সরকার দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে বিতর্কিত কমিশনের কার্যক্রম বন্ধ করে। তার পরেও তারা গোপনে কার্যক্রম চালাতে তৎপর থাকে। বর্তমানে বিতর্কিত সিএইচটি কমিশন আবারো পুনরায় পাহাড় নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করেছে!

সিএইচটি কমিশন শব্দের মধ্যে “কমিশন” শব্দটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের শব্দ। অথাৎ সরকারী শব্দ। সুতরাং “কমিশন” শব্দটি সুলতানা কামাল গংরা ব্যবহার করার অধিকার ও আইনি কোন ভিত্তিও নেই৷ কিসের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) শব্দের সঙ্গে “কমিশন” শব্দ যুক্ত করেছে?? পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যে যারযার খুশি মতো নামে-বেনামে সংস্থা/সংগঠন সৃষ্টি করতে পারেনা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সুলতানা কামাল গংদের মতো বুদ্ধিবৃত্তি করা জ্ঞানপাপীরা সুযোগ পেয়ে থাকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More