পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালি নির্যাতনের বিচার হয় না, যার কারণে বাঙ্গালির উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে!

0

||এম. কে আনোয়ার, খাগড়াছড়ি||

সে ১৯৭৯ থেকে পাহাড়ে বাঙ্গালির উপর গণহত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে ভিনদেশী দখলদার উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা৷ বাঙ্গালির উপর এ হত্যাকান্ড ও অবিচার চলছে যুগের পর যুগ ধরে! কেন জানি পার্বত্যাঞ্চলের বাঙ্গালি নির্যাতনের খবরাখবর এদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না! তাছাড়া এদেশের তথাকথিত গণমাধ্যম, সুশীল, বুদ্ধিজীবী ও মানবতার ধব্জাধারীরা পাহাড়ের বাঙ্গালিদের মানুষও মনে করে না! যার কারণে পাহাড়ে একের পর এক গণহত্যা ও বাঙ্গালির উপর অত্যাচার অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে সন্ত্রাসীরা৷ রাষ্ট্রও বাঙ্গালির প্রতি আন্তরিক নয়। কারণ এখন আর বাঙ্গালিকে রাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করে না! যার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলো বাঙ্গালিকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালিদের নিয়ে এসেছে ১৯৭৯ সালে। তৎকালীন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মূলত বাঙ্গালিদের পাহাড়ে নিয়ে আসা হয়েছিল । অথচ রাষ্ট্র রাষ্ট্রের দেওয়া কথা রাখেনি! বাঙ্গালিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি রাষ্ট্র। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান কোথাও থেমে নেয় বাঙ্গালিদের রেকর্ডীয় ভূমি দখল সহ বাঙ্গালির উপর হামলা-মামলা। এ অঞ্চলের ২৬ টি উপজেলায় বাঙ্গালির উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন- নিপীড়ন চালিয়ে বাঙ্গালিকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান থেকে পিছিয়ে রেখে রাজনৈতিক পদ-পদবী উপজাতীয়দের দখলে রাখছে সন্ত্রাসীরা।

বাঙ্গালিদের মধ্যে একটি অংশ ক্ষমতা ও পদ-পদবী লোভী। যার কারণে এ সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী বাঙ্গালিরা সাধারণ বাঙ্গালি নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি সবসময় চেপে যেতে চেষ্টা করে।

পার্বত্য চুক্তির আগে বাঙ্গালির উপর চলছিল গণহত্যা। এ গণহত্যার বিচার বাংলার মাটিতে হয়নি! চুক্তির মাধ্যমে সে গণহত্যার কাঠগড়া হতে দায়ী মুক্তি পায় সন্ত্রাসীরা।
কিন্তু চুক্তির পরও বিভিন্নভাবে বাঙ্গালি হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিনিয়ত পার্বত্য নির্যাতিত বাঙ্গালিরা অভিযোগ করে থাকে পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্রধারী বিরাজমান এবং সন্ত্রাসীদের থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। এসমস্ত অভিযোগ প্রশাসন কর্ণপাতই করে না! বরং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে প্রশাসন কর্তৃক পার্বত্য বাঙ্গালিদের হয়রানির শিকার হতে হয়। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও সন্ত্রাসীরা অধরাই থেকে যায়! রাষ্ট্র এ দায়ী এড়াতে পারে না। সবচেয়ে অবাক তথ্য হচ্ছে, বাঙ্গালি হত্যার জন্য রাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের আইনের মুখামুখি করার মত কোন চেষ্টাই করেনি! বরং হত্যা ও নির্যাতনের শিকার বাঙ্গালি পরিবার গুলোকে রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে দমিয়ে রাখার কৌশল করেছে। রাষ্ট্রের উদাসীনতাই পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালিরা বরাবরই মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। পাহাড় উপত্যকায় অসহায় বাঙ্গালির কান্না এদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিও সুশীল সমাজের কানে পৌছায় না!

যারা মানবতার ফেরি করে, তারা পাহাড়ে বাঙ্গালি নির্যাতিত হলে রহস্যজনকভাবে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে! অথচ তারাই পাহাড়ে পান থেকে চুন খসলে সেনাবাহিনী ও বাঙ্গালির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে!

লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, নানিয়ারচর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, মাটিরাঙ্গা কোথাও থেমে নেয় বাঙ্গালির উপর হামলা-মামলা। বাঙ্গালির উপর হামলা-মামলা নিয়ে কথা বলার মত কেউ নেয়। যারা কথা বলেন, তাদের দমিয়ে রাখা হয়! আর বাকিরা সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে পড়ে থাকে।

দুঃখজনক যে, রাষ্ট্রের মূল খুঁটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালিরা। আর যদি এই বাঙ্গালিরা পাহাড়ে টিকে থাকতে না পারে তাহলে পাহাড়ে রাষ্ট্রের অবস্থানও নড়বড়ে হবে। সেসময় আর বেশি দেরি নয়।

বাঙ্গালির সাইনবোর্ড বিক্রি করে যারা চলে, তাঁরাও বাঙ্গালির এই করুণ মূহুর্তে পাশে নেয়। সবাই সবার আখড় গোছাতে ব্যস্ত! বাঙ্গালির সাইনবোর্ড বিক্রি করে চলা অনেকেই বাঙ্গালির বিপদে এগিয়ে আসেন না। অথচ ভাগাভাগি ও পদ-পদবীর সময় তারা সবসময় নিজেদের বাঙ্গালির নিবেদিত কর্ণাধার দাবি করেন। অবাক না হয়ে পারলাম না!

পার্বত্য চুক্তির পর যত গুলো উপজাতি-বাঙ্গালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছে। সবগুলো ঘটনার সময় জাতীয় রাজনৈতিক দলের বাঙ্গালি নেতারা বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সন্ত্রাসীও দাদা বাবুদের পক্ষে চাটুকারিতা করেছে৷ ২০০১ সালে কাউখালী দাঙ্গা, ২০১০ সালে বাঘাইছড়ি দাঙ্গা, ২০১১ সালে কাউখালী দাঙ্গা, ২০১৩ সালে রাঙ্গামাটি কলেজ গেট দাঙ্গা, ২০১৬ সালে বগাছড়ি দাঙ্গা, ২০১৭ সালে লংগদু দাঙ্গা। প্রতিটি দাঙ্গার পরে মামলার শিকার হতে হয়েছে সাধারণ বাঙ্গালিদের। অথচ যারাই দাঙ্গার সূত্রপাত করেছে তারা মামলা থেকে বাদ পড়েছে! প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় বাঙ্গালি দালাল থাকে তারা ব্যবসা বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য বাঙ্গালির বৃহৎ স্বার্থ বির্সজন দিতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। উপজাতি-বাঙ্গালীর মধ্যে সংগঠিত প্রতিটি সংঘর্ষে এরাই বাঙ্গালির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে৷ পার্বত্য রাজনীতির অনেক কিছুই আমি আমার এ স্বল্প বয়সে প্রত্যক্ষ করি। আমার জানা মতে পার্বত্য বাঙ্গালিদের দমিয়ে রাখার পেছনে যেমন উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা দায়ী তেমনিই বাঙ্গালি দালালরাও প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে দায়ী।

বাঙ্গালিরা যখন অধিকার বঞ্চিত হয়, কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয় তখন রাজপথে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী আসে। আর এসমস্ত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়। আর এ বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করে জাতীয় রাজনৈতিক দলের কিছু বাঙ্গালি কতিপয় নেতা এবং এলাকার পাতি নেতারাই।

মাঠ পর্যায়ে যারা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে শুধুমাত্র তারাই জানে পুলিশের অশোভন আচরণ কাকে বলে এবং স্থানীয় বাঙ্গালিদের কটূক্তি কাকে বলে! পার্বত্য বাঙ্গালির জন্য কাজ করলে অধিকাংশ বাঙ্গালিরা সাম্প্রদায়িক মনে করে এবং ঘৃণার চোখে দেখে! পার্বত্যাঞ্চলের ৮০% বাঙ্গালি পার্বত্য সমস্যাকে সমস্যাই মনে করে না! মূলতঃ উদাসীনতা ও অসচেতন বাঙ্গালিদের কারণেই সাধারণ খেটে খাওয়া হতদরিদ্র বাঙ্গালিদের উপর হামলা করতে সাহস পায় সন্ত্রাসীরা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More