পাহাড়ের বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে লেখিকা রোকেয়া লিটা ধর্ষণের হুমকি পেয়েছিলো!

0

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের জীবনধারা নিয়ে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে উপন্যাস লেখায় ধর্ষণের হুমকি পেয়েছেন লেখিকা রোকেয়া লিটা। ২০১৬ সালে বইমেলায় ২২ শে ফেব্রুয়ারী উপন্যাসটি সময় প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন হুমকির সঙ্গে সঙ্গে অনেক পাহাড়ি তাকে অশালীন ভাষায়ও আক্রমণ করছেন। পাহাড়ি নারীরা পাহাড়ি পুরুষদের দ্বারা অহরহ ধর্ষণের শিকার হলেও বাঙালি পুরুষদের ধর্ষণকাণ্ড বেশি প্রচার হয়; উপন্যাসে এমন চিত্র তুলে আনার জেরেই তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান রোকেয়া লিটা। তবে এব্যাপারে তিনি গাজীপুরে জিডি করেছেন বলে জানা যায়। রোকেয়া লিটা বলেন, কদর্য ভাষায় আক্রমণসহ সরাসরি ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়েছে ফেসবুকে। আমার ছবি নোংরা ভাবে বিকৃত করা হয়েছে।

পাহাড়ি এলাকায় ধর্ষণ করলে প্রথাগত বিচারে তার শাস্তি শূকর জরিমানা। পাহাড়িদের প্রথাগত ও পরম্পরাগত নিয়ম এটি। সাংবাদিক রোকেয়া লিটার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ডুমুরের ফুল’-এ এমনই কিছু অসামঞ্জস্য বিচার ব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া গেছে। কখনও কখনও বিচারের নামে ধর্ষকের সঙ্গেই ধর্ষিতাকে বিয়ে দেয়া এবং রক্ষক যে ভক্ষক হয়ে যায়, সেই ধরনের ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে বইটিতে। রোকেয়া লিটা বলেন, এই উপন্যাসে এমন অনেক কিছু তিনি তুলে ধরেছেন, যা পাহাড়িদের পছন্দ হয়নি। এর আগে কেউ এ বিষয়টি তুলেও ধরেন নি। যখন কোনো গোষ্ঠী দেখে যে, কোনো বিষয় তাদের মতের বাইরে, তখন তারা ক্ষেপে ওঠে। এরমধ্যেই তারা আমাকে ফেসবুকের মতো প্রকাশ্য একটি জায়গায় ধর্ষণের হুমকিও দিয়েছে। দীর্ঘ আট মাস পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে, কখনও বা সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জানার চেষ্টা করেছেন তিনি। রোকেয়া লিটা বলেন, আমরা যারা ঢাকায় থাকি, প্রায়ই পাহাড়ে ধর্ষণের খবর পাই। এসব খবর পড়লে মনে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব ধর্ষণ হয়, তার সবই ঘটান বাঙালিরা। বিষয়টি আসলে তেমন নয়। কেবল বাঙালি কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগই আসে খবরে। পাহাড়ি পুরুষদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে অনেক।

কিন্তু সেসব বিষয় প্রকাশ্যে আনেন না সেখানকার পাহাড়ি নেতারা। তাই, ঢাকায় বসে বা ২/৩ দিনের জন্য পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে আসলে পাহাড়ের প্রকৃত অবস্থা বোঝা সম্ভব নয়। শুধু ধর্ষণ বা প্রথাগত বিচার নয়, বইটিতে উঠে এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনের অনেক অজানা তথ্য। আর এজন্যই বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘ডুমুরের ফুল’। লেখিকা জানান, উপন্যাসটির চরিত্রগুলো বাস্তব, তবে তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। উপন্যাসে মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি ও জীবনাচরণকে ভেতর থেকে উন্মোচন করা হয়েছে। পাহাড়ি নারী ধর্ষণ সম্পর্কে লেখিকা বলেন, পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনা যে ঘটছে না, তা কিন্তু নয়। হয়তো, এসব ঘটনার সঙ্গে বাঙালিরাও জড়িত। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। প্রায় আট মাস পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিলাম, দুজন পাহাড়ি মেয়ে ধর্ষণের ঘটনা আমার কানে এনেছে। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি যে, দুটি ঘটনাতেই অভিযোগ পাহাড়ি পুরুষদের বিরুদ্ধে। আরও অবাক হয়েছিলাম যে বিষয়টি দেখে, দুটি ঘটনাই ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল, ধর্ষকের বিচার চেয়ে কোনো আন্দোলন নেই, নেই কোনো মিছিল, পত্রিকার পাতায়ও কোনো খবর নেই। অথচ, ঢাকায় বসে আমরা শুধু খবর পাই, বাঙালিরা পাহাড়ি মেয়েদের ধরে এনে ধর্ষণের উৎসব পালন করছে। বুঝতে সমস্যা হয় না, এগুলোই হলো পাহাড়ের আসল রাজনীতি, এই রাজনীতির অনেকটা জুড়েই রয়েছে আমার উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে ‘সময় প্রকাশন’।

কী আছে ডুমুরের ফুলে: উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র শুভ্র ও নীলা দম্পতি। কাজের প্রয়োজনে শুভ্রকে কয়েক মাসের জন্য দেশের এমন একটি অঞ্চলে থাকতে হয় যেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কৃতি, শাসন ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নয়। শুভ্রর ফোনে হঠাৎ একদিন একটি অজানা নম্বর থেকে আসা ফোনকল কাল হয়ে দাঁড়ায় শুভ্র-নীলার দাম্পত্য জীবনে। পরস্পরের মধ্যে চলে ভুল বোঝাবুঝি। এরইমধ্যে শুভ্র-নীলার জীবনে ঘটে যায় অনেক অলৌকিক ঘটনা, যার কোনো ব্যাখ্যা নেই বিজ্ঞানের কাছে। আরও ধীরে ধীরে শুভ্র-নীলা হয়ে ওঠে ক্ষমতালিপ্সু নোংরা রাজনীতির প্রত্যক্ষদর্শী। এই রাজনীতিরই অংশ হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় শুভ্রর ঘনিষ্ঠ একজন সহকর্মী। এই মৃত্যুকে নিয়ে শুরু হয় নতুন আর এক রাজনীতি। শুধু জাতীয় রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিও সোচ্চার হয়ে ওঠে এই মৃত্যুকে ঘিরে। মূলত পাহাড়ের রাজনীতির পর্দার অন্তরালে দৃষ্টি ফেলেছেন লেখিকা। যে বর্ণনা হয়তো ঢাকায় বসে পাওয়া অনেক অভিজ্ঞতার সঙ্গেই মিলে না। উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয় বান্দরবান থেকে। একে একে বর্ণনা করা হয়েছে নানা স্পর্শকাতর ইস্যুর।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More