অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করে সম্পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের জন্য হুমকি!

0

আমার নাম জুয়েল রানা বাসা কুষ্টিয়া জেলা। আমি পেশায় স্টুডেন্ট। মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। কুষ্টিয়া ইসলামী ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এই ইউনিভার্সিটিতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ছাত্র-ছাত্রীরা এসে পড়াশোনা করছেন। মুসলিম শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা করেন। এখন প্রায় সকলেই কুষ্টিয়া ইসলামী ইউনিভার্সিটিকে সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিনেন। নিখিল চাকমা কুষ্টিয়া এসেছে রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার (মং খোলা) বুড়িঘাট হতে! বহুদুর পাড়ি দিয়ে নিখিল চাকমা কুষ্টিয়া ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে। সেও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত, আমার ক্লাসমেট। যেহেতু অনেক দূর থেকে এসে এখানে পড়াশোনা করে সেহেতু তার থাকার একমাত্র অবলম্বন ইউনিভার্সিটির ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসে থাকার কারণে সবসময় মেসে খাবার খেতে হয় অনিচ্ছার সত্ত্বেও।

একদিন চাকমা বন্ধু নিখিল জানালো সে আর ছাত্রাবাসে থাকবে না। আর মেসেও খাবে না। তাকে আমি একটা টিউশনি ঠিক করে দেওয়ার অনুরোধ করলো। তার ইচ্ছা সে যেখানে টিউশনি করাবে সেখানে দু’বেলা ঘরোয়া পরিবেশে খাবে। এতে নাকি সে তেলাক্ত খাবার থেকে রক্ষা পাবে। কারণ, হিসেবে জানালো, তার অতিরিক্ত গ্যাস্টিক সমস্যা, সবসময় বুক ব্যাথা থাকে, খাওয়ার প্রতি রুচি হয় না। বমি বমি ভাব হয় সবসময়। এটা বলার পর প্রথমবার বিষয়টি আমি গুরুত্ব দেইনি। তাই অতটা আগ্রহ দেখিয়ে তাকে টিউশনি ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। কিন্তু একটা সময় লক্ষ্য করলাম নিখিল চাকমা শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছে। আমি ভেবে চিন্তে তাকে মেসে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করতে বললাম। বিকল্প চিন্তা করলাম তাকে হয়তোবা কোথাও রাখব না হয় একটা ভালো টিউশনি ঠিক করে দেব। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে তার সমস্যাও ততোই৷ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমি দ্রুত তার জন্য টিউশনি খুজতে লাগলাম কিন্তু ভালো ফ্যামিলিতে টিউশনি পাচ্ছিলাম না যেখানে তার দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থাটা নিশ্চিত হবে।
কী আর করবো? পছন্দ মত টিউশনি না পেয়ে নিখিল চাকমাকে বাধ্য হয়ে আমার নিজের বাসায় নিয়ে আসলাম। আপাতত আমার বাসায় রেখে দিলাম ভালো একটা টিউশনি ঠিক করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। নিখিলকে আমার বাসায় নিয়ে আসার পর আমাদের মধ্যে ভালো একটা সখ্যতা গড়ে উঠে৷ মনে হচ্ছে সেও আমাদের ফ্যামিলির একজন। ফ্যামিলির অন্যান্য সদস্যদের মতো তাকেও সবাই আপন করে নিয়েছে৷ এ-কারণে নিখিল চাকমাও একইভাবে বাসায় সবার সাথে খুব সহজে মিশে গেছে৷ সে এখন আমাদের বাসার নিয়মিত সদস্য।

একদিন নিখিল চাকমা বললো জুয়েল এখন তো ইউনিভার্সিটি ক্লাস আপাতত বন্ধ আছে এ ফাঁকে রাঙামাটি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। আমাকে বললো সঙ্গে তোকেও নিয়ে যাবো আমাদের রাঙামাটি। সেই যখন বললো আমাকে নিয়ে যাবে তখন আমার ভিতর একটা ভালো লাগা শুরু হলো। আমার এমনিতেই প্রিয় সখ ভ্রমণ। তাছাড়া আমার এর আগে কখনোই রাঙামাটি যাওয়া হয়নি মূলত পরিচিত কেউ না থাকার কারণে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ানো আমার প্রচন্ড ইচ্ছা। মোদ্দাকথা আমার শৈশব থেকেই ভালোলাগার দিক হলো ভ্রমণ। ফ্যামিলির কড়াকড়ি শাসনের মধ্যে থাকার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট ছাড়া দেশের অধিকাংশ জেলাগুলাতে ভ্রমণ করা সম্ভব হয়নি। বন্ধুবান্ধব ও টিভির মাধ্যমে রাঙামাটি পাহাড়, পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অনেক শুনেছি। কখনো আমার সরাসরি দেখার মতো সুভাগ্য হয়নি। এখন যখন চাকমা বন্ধু যাওয়ার জন্য বলল, এমন সুযোগ কী হাত ছাড়া করা যায়? আমার যাওয়ার প্রবল আগ্রহ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একটু ঘুরে আসি। যে ভাবনা সে কাজ। ফ্যামিলির সবাইও রাজি হলো নিখিল চাকমার বাড়িতে যাব বলাতে। মাসখানেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবো এমন আশা নিয়ে আমরা দু’জন প্রস্তুতি নিয়ে বাহির হয়েছি। অক্টোবর ৭ তারিখ কুষ্টিয়া হতে প্রথমে ঢাকা আসলাম। রাতে ফকিরাপুল হতে ইউনিক পরিবহনে যাত্রা শুরু করে দু’জনে রাঙামাটি এসে পৌঁছলাম সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ। ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগ থেকে আমরা রাঙামাটি প্রবেশদ্বারে। মোটামুটি যখন আমাদের গাড়ি গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথে তখন চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আসছে আর ভোরের হাওয়া গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে এবং রাস্তার দুইপাশে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরুপ রাঙামাটির পাহাড় সমূহ দেখা যাচ্ছে। জীবনে এই প্রথম বড়বড় পাহাড় দেখলাম। মনটা একবারেই ছুঁয়ে গেলো।

রাঙামাটি শহর হইতে দু’বন্ধু নানিয়ারচর পৌঁছে গেলাম সকাল ১১ টায়। নিখিলের মা-বাবা ও ছোট বোন রিপার অতিথি আপ্যায়ন করতে কৃপণতাবোধ করেনি। আমিও নিশ্চিত যে, নিখিল তার ফ্যামিলিকে পূর্বে আবাস দিয়েছে যাতে আপ্যায়ন বা সমাদরে কোন কমতি না রাখে। হয়তোবা সেজন্য আমাকে সবাই এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে৷ আসার পর গোসল করে ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলাম। খাবারের মেনুতে বাহারী রকমের ঐতিহ্যবাহী রান্নাগুলো ছিল! উপজাতিদের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো যে এতটাই সুস্বাদু তা আগে কল্পনার জগতেই ছিল না। সবাই একসাথে মজা করে খেয়েছি। পাহাড়ে আসটা স্বার্থক হয়েছে বলে মনে হলো।

দীর্ঘ পথ যাত্রায় শরীরের ক্লান্তির চাপটা কাটাতে জব্বর ঘুম দিলাম। বিকাল ৪ টার সময় দুু’ই বন্ধু বাইক নিয়ে বেরিয়ে নানিয়ারচরে মনমুগ্ধকর স্থানগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলাম। রাঙ্গামাটি নানিয়ারর সেতুর কথা হয়তো অনেকেই শুনেছেন৷ পাহাড়ের জন্য এইটা পদ্মা সেতুর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। যারা এসেছে তারা বলতে পারবে সেতুটি কত চমৎকার এবং দৃষ্টিনন্দিত। রাঙামাটি, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি ভ্রমণ আর উপজাতি সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনসহ কাটানোর মূহুর্তের বর্ণনা দিতে গেলে লেখা বিশদ হবে। এত বড় বিশদ লেখা বর্তমান সময়ে পাঠকের পড়ার যেমন আগ্রহ নেই তেমন পড়ার সময়ও নেই। আমি নিজে অন্য জনের বিশদ লেখা পড়তে বিরক্তবোধ করি। তার জন্য বিশদে না গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম সেটা একটু পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরার প্রয়াস করি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে। অভিজ্ঞতার ভান্ডারে যেটা ছিল সেটা হলো, “সবকিছুতে বাংগালীদের প্রতি বৈষম্য, অন্যায়-অবিচার ও সেনা বিরোধী অবস্থান, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম সরেজমিনে প্রত্যক্ষকরা ।” একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে বারবার মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিজের বিবেকের কাছে।

চাকমা বন্ধু নিখিলের সঙ্গে তার গ্রামের বাড়ি রাঙামাটি নানিয়ারচর ও তার জুরাছড়ি আত্মীয়-স্বজনদের এলাকায় বেড়াতে গিয়ে যেটা সচারাচর অনুভব করেছি সেটা হলো- উপজাতি সমাজ ব্যবস্থা বাংগালীকে চরমভাবে ঘৃণা করে। পাহাড়ি মেয়েদের সঙ্গে বাঙ্গালী ছেলেদের কথা বলা উপজাতি সমাজে নিষিদ্ধ। আমি বাংগালী ছেলে আমাকে কেন নিখিল চাকমা বেড়াতে নিয়ে এসেছে এই নিয়ে তাকে জায়গা জায়গায় কৈফিয়ত এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে! শুধু আমাকে নিয়ে আসার কারণে তাকে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে! উপজাতি সমাজে নাকী বাংগালীদের নিকৃষ্ট জাতি, ধর্ষক ও ভূমি দখলদার হিসেবে মনে করা হয়! সেটেলার ও বলা হয়! আর এ-কারণে বাংগালী অতিথিদের নিয়ে আসলে অনেক সময় সমাজের কার্বারী, হেডম্যান ও উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনসহ কিছু মানুষের কটুকথা শুনতে হয়। যেমনটা আমাকে নিয়ে আসার কারণে শুনতে হয়েছে বন্ধু নিখিলকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও নৈসর্গিকতার স্থান এবং বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বসবাসের অঞ্চল হিসেবে আমার ধারণা ছিলো প্রকট। কিন্তু আরেকটা বাজে ধারণা ছিল এখানকার বাংগালী ও সেনাবাহিনী এবং সরকারের চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণ সম্পর্কে। আর অন্যান্য বিষয়ে জানা ছিলনা। দেশের সমতলে আমরা যারা বসবাস করি কিংবা থাকি তারা প্রায়শই যেটা শুনতে পায় সেটা হলো- “পাহাড়ে বাংগালী কর্তৃক উপজাতি নারী ধর্ষণ, ভূমি দখল এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক উপজাতি নারী ধর্ষণসহ গণহত্যা সংঘটিত করা হয়!” এমন মারাত্মক অভিযোগ গণমাধ্যম, প্রগতিশীল ও সুশীল সমাজের তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিকদের নিকট থেকে প্রায়ই শুনে থাকি। আরো শুনি যে, সহজসরল উপজাতীয়দের জীবনযাপনে ছাপ পড়েছে সেনা ও বাংগালীদের পাহাড়ে উপস্থিতির কারণে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এমন খবরাখবর আমরা যখন শুনি তখন পার্বত্য বাংগালী ও সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী মহলের উপর আমাদের প্রচন্ড ঘৃণা ও ক্ষোভ হয়। এই নিয়ে আমরা অনেক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি তাদের উপর। আসলে পাহাড়ের চরম বাস্তবতা কী তাই? প্রকৃত চরমবাস্তবতা অথাৎ যেটা আমি নিখিলের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম না গেলে কখনোই জানা হত না। পার্বত্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পর তো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম ভবিষ্যতে আর পার্বত্য চট্টগ্রাম যাবোই না। মনও স্থির করেছিলাম যাবো না। যাই হোক তবে কিন্তু একটা অর্জন নিয়ে পাহাড় থেকে ফিরে এসেছি। সেটা হলো বাংগালী ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে মনের মধ্যে যে একটা নেগেটিভ ধারণা, চিন্তা-চেতনা এবং ঘৃণিত চর্চা ছিল সেটার অবসান হলো এরমধ্য দিয়েই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কী? বাংলাদেশ সরকার এবং উপজাতীয়দের একাংশের নেতা পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) তথাকথিত শান্তিবাহিনীর প্রধান সন্তু লারমার মধ্যকার সম্পাদিত চুক্তিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ বলা হয়। ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের দু’পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বলা হয়।’ এই চুক্তিতে সরকার উপজাতি জনগোষ্ঠীকে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা এবং অসাংবিধানিকভাবে বেপরোয়া ক্ষমতাবল প্রদান করে। চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু ধারা অবাস্তবায়িত রয়েছে। সরকারের পক্ষ হতে প্রত্যাশা ছিলো শান্তিবাহিনী তাদের অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এর মাধ্যমেই জিইয়ে থাকা দীর্ঘ পার্বত্য রাজনৈতিক সংকট সমাধান হবে। কারণ এর আগে এখানে রক্তপাত, হত্যা ও গণহত্যায় সাধারণ উপজাতি-বাংগালী উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ শিকার হয়েছে। দীর্ঘ এ যুদ্ধে সেনাবাহিনী এবং শান্তিবাহিনী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় তড়িঘড়ি করে তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সঙ্গে উক্ত চুক্তি সাক্ষর করে। যদিও চুক্তির ফলে পাহাড়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরে আসেনি। বিরাজমান পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। বরং চুক্তির দোহাই দিয়ে সুকৌশলে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের শক্তিসামর্থ্য বৃদ্ধি করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো!

এদেশের অধিকাংশ মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। চুক্তি সম্পর্কে যারাই সম্পূর্ণ জানেন, কিংবা অবগত তারা অত্যান্ত সুশীল, প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবি ও রাম-বাম প্রভূতির। আর আমরা সাধারণ পাবলিক চুক্তির খুঁটিনাটি সম্পর্কে অতটা ওয়াকিবহাল নয়। যতটুকু গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের মাধ্যমে জানতে পারি বা জানি সেটা হলো” সরকার ১৯৯৭ সালে উপজাতিদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত করেছে ঠিক কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না! পাহাড়ে এখনো সেনা শাসন চলছে। যার কারণে পাহাড়ে ভূমি বিরোধ ও সংঘাত উপজাতি-বাংগালী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সংঘটিত হয়।” মূল কথা হলো সবকিছুর জন্য সরকারকে দায়ী করে বর্নিত কুচক্রী মহল। এমনকি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারকে দায়ী করা তাদের একটা কালচারের পরিণত হয়েছে ! কিন্তু বন্ধু নিখিলের রাঙামাটিতে গিয়ে যেটা অর্জন হলো সেটা বিবেচনা করে খুব সহজে অনুমেয় যে, চুক্তি সরকার কেন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করছে না এবং চুক্তি বাস্তবায়ন না করার অঘোষিত কারণ গুলোর সম্পর্কে। আমি নানিয়ারচর ও জুরাইছড়ির দুর্গম অনেকগুলো গ্রামে ঘুরাঘুরি করেছি। এই ঘুরাঘুরি করার সুযোগে স্পষ্টভাবে নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করে দেখেছি যে, পাহাড়ে অস্ত্র নিয়ে সেনা পোষাকে এখনো উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্যমান রয়েছে! একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশের মাটিতে কীভাবে অবৈধ অস্ত্রধারী সেনা পোষাকে বিদ্যমান থাকে? কিভাবে সামরিক সরঞ্জামাদি নিয়ে সজ্জিত থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিবেন?? জানি কেউ এসমস্ত প্রশ্নের জবাব দিবেন না। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে থাকবেন।

কোথায় এদেশের সুশীল, বুদ্ধিজীবি কোথায় রাম-বামরা? যারা কীনা প্রতিটি মূহুর্তে পাহাড় হতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার এবং বাংগালী সরিয়ে নিয়ে আসার জোর দাবি করে থাকে? তারা কী জানে না পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্রধারী রয়েছে? যদি পাহাড়ে চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্যমান থাকতেই পারে। তাহলে সে পাহাড়ে সেনাবাহিনী থাকলে সমস্যা কোথায়? এ-সম্পর্কে কেন নীরব তথাকথিত মহলটি? এটা অন্যরা না জানলেও আমি জানি। আমার তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও ফেরি করা চেতনা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা হয়েছে পাহাড়ে মাসখানেক অবস্থান করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী বিশ্বাসঘাতকরা শুধু বাংগালী থেকে চাঁদাবাজি করে থেমে থাকে না। বরং স্বজাতি উপজাতি থেকে এর-চাইতে অনেক বেশি চাঁদাবাজি করে। পার্বত্য চুক্তির আগেকার সময় ছিল সন্ত্রাসীরা এক দল, এখন ভেঙে হয়েছে চার দল। কিন্তু চার দল হলেও তাদের সকলের আর্দশ, লক্ষ্যমাত্রা, চিন্তা চেতনা নির্ধারণ কিন্তু অভিন্ন। তারা সকলে চাঁদাবাজি করেই অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করে। তারা চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, হত্যা ও খুন-গুম করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। বাংলাদেশ থেকে পৃথক করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্মল্যান্ড নামক রাষ্ট্র গঠন করবে। এবং এধরণের দেশদ্রোহী চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য স্থির করে কাজ করছে তারা সবাই একাট্টা হয়ে! গঠন করেছে সামরিক বাহিনী। তাদের রয়েছে বিশাল অর্থনীতিক চালিকা শক্তির ‘উৎসহ!’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী, খৃষ্টান মিশনারী, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও কুটনৈতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এসব কিছু কীসের আলামত? একটি স্বাধীন দেশে কী হচ্ছে? সে খবর কী এদেশের সুশীল বুদ্ধিজীবিরা রাখেন? তারা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করার ধুয়ো তুলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রকারী পক্ষকে সাহায্য করে যাচ্ছে। যে বিষয়টি আমি পাহাড়ে চাকমা বন্ধুর সাথে তার নিজ গ্রামে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি স্বচক্ষে। আমার সাথে স্থানীয় উপজাতি বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দীর্ঘসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সহ বর্তমান হালচাল নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর পরিসরে। আমি সবার সঙ্গে খোলামেলাভাবে (ফ্রি) চলার মতো ছেলে। প্রথমে উপজাতি সমাজ আমাকে ঘৃণা করলেও ফ্রি মনোভাব এবং কৌশল অবলম্বন করার কারণে শেষভাগে তারা মিশে একাট্টা হতে বাধ্য হয় আমার সঙ্গে। দীর্ঘ এক মাস পাহাড় ভ্রমণ করে তাদের সাথে সরেজমিনে কথা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা, সংকট ও পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণসহ চাঁদাবাজির বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় কোথায় গিয়ে পৌছে সে তথ্যও আদায় করতে সক্ষম হই৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমরা সমতলের মানুষ যে সমস্ত তথ্য গণমাধ্যম ও উপরোক্ত মহলের নিকট হতে প্রাপ্ত হই, সেসমস্ত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক ও অস্তিত্বহীন। এধরণের মিথ্যাচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা আড়াল করার জন্য এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ও উপজাতি সন্ত্রাসীরা রটিয়ে থাকে প্রতিনিয়ত। অপপ্রচারের বড় কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা ও বাংগালী সরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে পৃথক করে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবে এবং এই গভীর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচার করা হয়৷ আর এই উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাৎসরিক পাহাড় হতে চাঁদাবাজি করে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যম দাবি করছে সন্ত্রাসীরা বাৎসরিক ৪০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজির এ অর্থের ২০% দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ক্রয় করা হয়। পার্শ্বর্বতী দেশগুলো হতে অবৈধ অস্ত্র আসে সীমান্ত দিয়ে হরহামেশাই। ৩০% অর্থ সন্ত্রাসীদের প্রথম সারির শীর্ষ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। ২৫ % টাকা সশস্ত্র গ্রুপ ও রাজনৈতিক শাখাসহ সহযোগী সংগঠনের পেছনে বেতন-বাতা প্রদান করা হয়। ১৫% অদৃশ্য অদৃশ্য শক্তির হাতে পৌছায় এবং ১০% তাদের মতাদর্শের গণমাধ্যম ও এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে যায়। অথচ এ বিষয়টি কখনোও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়না! মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন বা বাংগালী কর্তৃক উপজাতি ভূমি কেড়ে নেওয়ার গঠন প্রবাহ গুলো অবান্তর হলেও গণমাধ্যম তা ফালাও করে প্রচার করে!

সেনাবাহিনী ও বাংগালীকে পাহাড় হতে বিতাড়িত করার জন্য প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ষড়যন্ত্র তৈরিও করা হয়। ১৯০০ সালের বৃটিশ কর্তৃক প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন আইনের মাধ্যমে ভূমি অধিকারের সুযোগ পেয়ে এবং পার্বত্য চুক্তিতে অসাংবিধানিকভাবে একগুচ্ছ সুবিধা পেয়ে এখন সন্ত্রাসীরা তা ব্যবহার করছে এবং নিজেরা সুসংগঠিত হচ্ছে ভবিষ্যতে দেশভাগের জন্য। পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে মূল বাধা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজার বিশেক অবৈধ অস্ত্রধারী থেকে অস্ত্র উদ্ধার না করে এবং বাংলাদেশ ভারত ও মায়ানমারের অরক্ষিত সীমান্তে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ না করে পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এদেশের ভূখণ্ডের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়।

আমি সমতলের মানুষ হিসেবে পাহাড়ের শাসন ব্যবস্থা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের অস্ত্র নিয়ে সক্রিয় থাকার অস্বাভাবিক ব্যপারটি মেনে নিতে পারছি না। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতার নিরিখে বলতে গেলে উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা এবং বিদ্যমান অস্থিরতার জিইয়ে রেখে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বেঘাত ঘটাচ্ছে। অথচ এই সন্ত্রাসীরা আবার জোর গলায় গণমাধ্যমে ও বাম পাড়াতে সরগরম করছে যে, “সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না; পাহাড়ে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে কারাগার বানিয়ে রেখেছে; সেনা শাসন চলছে পাহাড় জুড়ে! অবৈধ সেটেলার বাংগালীরা সেনা সহযোগিতায় উপজাতিদের ভূমি দখল ও নারী ধর্ষণ করে পাহাড়ের পরিবেশ দূষিত করছে!” এ ধরনের মিথ্যা গুজব রটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মান ক্ষুন্ন করছে বর্হিরবিশ্বে! অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এত জঘন্যতম মিথ্যাচারের পরেও সরকার যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। সুশীল, জ্ঞানপাপী ও বুদ্ধি বৃত্তি করা ব্যক্তিরা একটিবারও বলে না পার্বত্য চুক্তির পরেও পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী সক্রিয় কেন? চুক্তির মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করে অস্ত্র পরিহার না করে সন্ত্রাসীরা যদি বিদ্যমান থাকে তাহলে সরকারও সন্ত্রাসী দমনে এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন রাখা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি। প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা হোক। এতে সন্ত্রাসীগোষ্ঠ, বাম পাড়া কিংবা বুদ্ধি বৃত্তি করা বুদ্ধিজীবিরা অখুশি হলেও রাষ্ট্রের জন্য সঠিক পদক্ষেপ হবে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা। দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের কথায় সম্পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড হুমকির সম্মুখীন করার যৌক্তিকতা নেই। আর যদি সম্পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হয় তাহলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, এবং সংবিধান পরিপন্থী চুক্তির ধারাগুলো সংশোধন করে তার পর চুক্তি বাস্তবায়ন করা হোক।

বন্ধু নিখিল চাকমাদের পাহাড়ীরা এখনো আমাদের বাঙ্গালীদের ঘৃণা চোখে দেখে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের হতদরিদ্র, পিছিয়ে পড়া পাহাড়ীদের গণহারে সহজসরল তকমা দেওয়া হয়। সরকার পার্বত্য চুক্তির পর ব্যাপক হারে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে৷ এর ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ীদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ পাহাড়ীরা পাহাড়ী ও বাঙ্গালী ভেদাভেদ করেনা। তারা মিলেমিশে থাকতে চায়। কিন্তু তারপরও পাহাড়ীদের একটি অংশ বাঙ্গালী, সেনা তথা সরকারকে ঘৃণা দৃষ্টিতে দেখে। পাহাড়ে এই সাম্প্রদায়িকতার বিষ বপন কারা করেছে? তার কী অবসান কখনো হবে?

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More