উপজাতি জনগোষ্ঠীর চেয়ে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী পিছিয়ে কেন?

0

পাহাড়ের প্রকৃত বাস্তবতা না জেনে যারা ঢাকা-চট্টগ্রাম বসে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সরগরম করে তারা বর্ণচোরা, কথিত সুশীল, এবং জ্ঞানপাপী ও বুদ্ধি ব্যবসায়ী।
সরকার তৎকালীন ১৯৮৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) বা জেএসএস সন্ত্রাসীদের আক্রমণ হতে রক্ষা করার তাগিদে দ্রুততার সাথে যে, গুচ্ছগ্রাম সৃষ্টি করেছে, সেসব গুচ্ছগ্রাম গুলো নূন্যতম মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়। ৪০/৫০ পরিবারের গুচ্ছ গ্রামে এখন হাজার হাজার বাঙ্গালী মানবেতরভাবে জীবনযাপন করে আসছে৷ দিনমজুর, হতদরিদ্র, নিপীড়ন-নির্যাতিত ও শোষিত বাঙ্গালীদের তিন বেলা খাওয়ার জুটে না সময়-সময়েই৷ গোয়াল ঘরের মধ্যে বসবাস করে দিন অতিবাহিত করতে হয় জীবনের নিয়মে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও প্রকৃতির নিদর্শন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙ্গালীর জন্য এক অভিশপ্ত অঞ্চল বলা যায়। তবুও দেশপ্রেম ও দেশের মাটিকে ছায়াতল ভেবে পার্বত্য মাটিকে রক্ষার দাগিতে নিজের সবকিছু বির্সজন দিয়ে বছরের পর বছর রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার হচ্ছে পার্বত্য বাঙ্গালীরা। গুচ্ছগ্রাম গুলোর অবস্থা স্বচোখে প্রত্যক্ষ না করলে অনুমেয় হবে না এর বাস্তব চিত্র। পানির তীব্র সংকট রয়েছে গুচ্ছগ্রাম গুলোতে। সরকার নাগরিক সুবিধার্থে নেওয়া পদক্ষেপ গুলো হতে গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীরা প্রায়ই বঞ্চিত। সরকারী পর্যাপ্ত সহযোগীতা পৌছায় না গুচ্ছগ্রাম গুলোতে। শৌচাগার গুলোর দুর্গন্ধ, পানি ও বর্জ পরিহার করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার বাঙ্গালী শিশুরা নানান রোগবালাই এ আক্রান্ত হচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অনেক শিশু শারীরিক মানসিক বিকাশের বাধাগ্রস্ত হয়। চুক্তির অনুযায়ী এখানকার ৯০% এর অধিক সুযোগ-সুবিধা উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ। অবশিষ্ট ১০% সুযোগ-সুবিধাও বাঙ্গালীদের প্রদান করা হয়না! পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড-এর বরাদ্দ ও প্রকল্প বাঙ্গালীদের জন্য নয়। এ অঞ্চলের স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোও পূর্বের অনগ্রসর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান, শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশ অগ্রসর করে যেমনটা ভূমিকা রাখছে, ঠিক তেমনটা কিন্তু বাঙ্গালীদের বেলায় রাখছে না।উপরোক্ত বরাদ্দে শিক্ষা সংস্কৃতি অর্থনীতি এবং সামাজিক অবস্থায় তারা এখন এত উগ্র ও অগ্রসর হয়েছে যে তাদের অবস্থানে পৌঁছুতে কিংবা বাংলাদেশের অন্যান্য সকল জেলা থেকে তারা উন্নত। উপজাতীয়রা এখানে বরং বাঙ্গালীদের দমিয়ে রাখার নীল নকশা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বলাবাহুল্য যে, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি বৃদ্ধির নিমিত্তে নানান কর্মমুখী জনবান্ধন প্রকল্প বরাদ্দ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় এবং এনজিও, আইএনজিও,বিদেশী দাতাসংস্থা গুলো। এসমস্ত প্রকল্পগুলো বন্টন করে বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য তিন জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে দেওয়া হয়। জনবান্ধব প্রকল্প বন্টন করার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে চুক্তির শর্ত অনুসারে উপরোক্ত প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের সিংহভাগ উপজাতীয়দের হাতে থাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো উপজাতিদের কল্যানার্থে ব্যয় করে। উপজাতি স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে এর ক্ষমতা থাকার ফলে প্রাপ্য অধিকার হতে বাঙ্গালীরা বঞ্চিত ও নিগৃহীত হচ্ছে প্রতি পদে পদেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করা মিশনারি, এনজিও, আইএনজিও, বিদেশী দাতাসংস্থা উপজাতীয়দের অর্থনীতি সচ্ছল, শিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ উন্নত জীবনযাপনে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। তবে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অধিকারের দোহাই দিয়ে গর্জে উঠা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, খুন-গুম ও আধিপত্য বিস্তার করার পাশাপাশি বন্দুকের নল দেখিয়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একতৃতীয়াংশ লুটপাট করে খাচ্ছে। সমতলের অনেক কুশীলব সুশীল সমাজ মায়াকান্না করে অভিযোগ করছে, উপজাতীয়রা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ সরকার সমস্ত সুযোগ সুবিধা ঠিকই দিচ্ছে। এখানে তাদের না পাওয়া নিয়ে দায় তো পার্বত্য বাঙ্গালী তথা রাষ্ট্রের নয়। রাষ্ট্র দিচ্ছে তা লুটে পুটে খাচ্ছে তাদেরই কর্ণাধার পরিচয়দানকারীরা। আর্থসামাজিক অবস্থা,রাস্তাঘাট,ব্যবসা-বাণিজ্য,অবস্থা কত উন্নয়ন,বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা প্রভৃতি উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পগুলো সকলেই ভোগ করছে কিন্তু এর বাস্তব মুখী করছে উপজাতীয়রা।এরপরও যদি উপজাতিরা দরিদ্র থাকে সেটা একান্তই তাদের নেতৃবৃন্দের জন্য।উপরন্ত উপরোক্ত লেখার মাধ্যমে যেটা বোঝাতে চেয়েছি উপজাতীয়রা যেসমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তার ৫% ও যদি এখানকার বাঙ্গালীরা ভোগ করতেন, তাহলে বাঙ্গালীদের চরম দুঃখ দুর্দশ হয়তো কিছুটা হলেও অবসান হতো।পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠী তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবেই সমাদৃত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More