নিজ সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলে বিদেশে পলায়নরত নাথান বম।

0

||বান্দরান প্রতিনিধি||

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২ নং রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেন পাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেও জুমচাষীর পুত্র। ২০১৭ সালে নাথান বম নিজেকে সভাপতি করে ধীরে ধীরে কেএনএফ নামে একটি সশস্ত্র দল বা সংগঠন গঠন করেন। এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী অঞ্চল সমূহে (অন্ততঃ ৯ টি উপজেলা) নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র/ জৌ- ল্যান্ড গঠন করা। এই দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম, চোরাগোপ্তা হামলা এবং রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা শুরু করে।

কেএনএফ এর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাথান বম নিজ সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর থেকে তার থেকে আস্তা উঠে যায় কেএনএফ এর একাংশসহ বম সম্প্রদায়ের।

সৃষ্ট সমস্যা রাজনৈতিক উপায়ে নিরসনে কেএনএফ এর দাবিদাওয়া আলোচনার টেবিলে সমাধানের পথ খুঁজে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এর ফলে সরকার এবং কেএনএফ মধ্যকার শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কয়েকটি দাবিদাওয়ার বিষয়ে উভয়পক্ষ চুক্তিতে পৌছে। এতে বাধা সৃষ্টি করে কেএনএফ এর আভ্যন্তরীণ কোন্দল। এর ফলে শান্তি প্রক্রিয়া বেশি দূর এগোতে পারেনি। গত ২ ও ৩ এপ্রিল শান্তি প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত করতে নাথান বমের নির্দেশে কেএনএফ ব্যাংক ডাকাতিসহ পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুট করে।

নিজের কুকিভুক্ত বম সম্প্রদায়কে জাতির অধিকারের স্বপ্ন দেখিয়ে অতঃপর বিপদে ফেলে বিদেশে পলায়নরত৷ এমতাবস্থায় নাথান বম অধিকার আন্দোলনের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কাপুরুষোচিত হিসেবে আখ্যায়িত করছে সবাই।

সরকারি বাহিনীর অভিযানে সংগঠনের নেতাকর্মী এবং নিজ সম্প্রদায়কে একা ফেলে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সর্বত্র চাউর হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি গেরিলা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য লজ্জাকরও বটে।

নাথান বম এই মূহুর্তে কোথায় আছে সর্বমহলে এমন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা মুখে মুখেই। স্থানীয় এক বম বলেন “আমার মতো অনেকেই জানেন যে নাথান মিজোরামের লংটলাই জেলার মুনাউন গ্রামে থাকতেন। তবে নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।”

স্থানীয়রা বলেন, “নাথানের সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। তিনি প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করেন। তিনি প্রায়ই লন্ডনসহ ইউরোপিয়ান অনেক দেশ ভ্রমনে যান। তিনি একাধিক বার রুমা ও বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী কেএনএফ এর
গোপন আস্তানায় অবস্থান করেছেন বলেও জানা যায়। বর্তমানে তার অবস্থান ভারতের মিজোরামে বলে জানা যায়।”


স্থানীয়রা আরো জানান, মিজোরামের সাইয়া জেলার থুলসি নামের একটা এলাকায় চলে গেছেন। এলাকাটি মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা। মিজোরামের স্থানীয় মিজো সম্প্রদায়ের আশ্রয়েই নাথান সেখানে রয়ে গেছেন বলে মনে করা হয়।

নাথান বম সুইজারল্যান্ডে গেছেন বা আছেন এমন খবর কেএনএফ তাকে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা থেকে দায়মুক্তি দিতে প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা কেএনএফ মুখপাত্র বা ইনফরমেশন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের (আইআইবি) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং সুইজারল্যান্ড যাওয়ার যে তথ্য প্রদান করেছেন, তা ডাহামিথ্যে৷ তথাকথিত ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং আরো বলেন, কেএনএফ এর ৫০০০ সশস্ত্র সদস্য রয়েছে। বস্তুতঃ সব মিলিয়ে বম জাতি রয়েছে, ১৩০০০ হাজার প্রায়। নিঃসন্দেহে বলা যায় এই তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা তাদের সাংগঠনিক কৌশল৷ পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যম কেএনএফ এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডে থাকার সংবাদ প্রকাশ করেছে। তথ্য অনুসন্ধান এবং বিচার- বিশ্লেষণ অনুযায়ী নাথান বম ভারতের মিজোরামে আত্মগোপনে রয়েছে বলে ধারণা করা যায়। ব্যাংক ডাকাতি ও সরকারি বাহিনীর অস্ত্র লুটপাটের ঘটনাটি একটি মারাত্মক ঘটনা৷ যা দেশের গুন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌছেছে৷ তাই এই ঘটনার সঙ্গে নাথান বম জড়িত নয় বুঝাতেই নাথান সুইজারল্যান্ড ছিল বা আছে বলে উদ্দেশ্য প্রণোদীতভাবে প্রচার করা হচ্ছে৷

নাথান বম সংগঠন তথা বম সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলেছে এটা স্পষ্ট হয়েছে, তার পালিয়ে যাওয়া, ছেলেসন্তান মিজোরামে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করানো এবং স্ত্রী লাল সমকিম বম সরকারি চাকরি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনা। রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সমকিম বমকে লালমনিরহাট বদলি দেয়। বদলি দেওয়ার পর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেনি সে।

উপরোক্ত ঘটনাগুলো থেকে অনুমেয় নাথান বম নিজ সম্প্রদায় এবং সংগঠনের সদস্যের বিপদে ফেলেছে। এই মূহুর্তে কেএনএফ সদস্য এবং বম সম্প্রদায়কে বিপদগ্রস্ত নাথান বমের সঙ্গ ত্যাগসহ তার আদেশ-নির্দেশ পরিত্যাগ করাই একমাত্র সমস্যার সমাধান হতে পারে। এর মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More