বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী দমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই।

0

১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বন্ধ করতে পারেনি চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, অপহরণ বাণিজ্য, হানাহানি, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও জাতিগত বিবাদ। চুক্তির পূর্বেকার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় রয়েছে! চুক্তির পূর্বে ছিল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)। চুক্তির পরে এই জেএসএস বিভক্ত হয়ে হয়েছে পাঁচ-ছয়টি সংগঠন। এসব সংগঠন নামে আলাদা আলাদা বা বিভক্ত হলেও বাঙালি ও সেনাবাহিনী বিষয়ে তারা এক অভিন্ন৷ চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠনগুলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংগঠনগুলোর মধ্যে যত বিরোধ থাকুক জাতির স্বার্থে সকলেই এক। সংগঠনগুলো বাৎসরিক পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ১০০০ কোটি টাকা সমপরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করে। চাঁদাবাজির এই বিপুল অর্থ, অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিজেদের বেতন ভাতা এবং শীর্ষনেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যয় হয়। তাদের চাঁদাবাজির এবং কল্পিত পৃথক রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে বড় বাধা বাঙালি এবং সেনাবাহিনী। মূলত তার জন্যই তারা বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে। বাঙ্গালীর ও সেনাবাহিনীকে পাহাড় থেকে সরিয়ে নিতে দেশ-বিদেশে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রোপাগান্ডা রটিয়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার মিশনে নেমেছে সন্ত্রাসীদলগুলো।

অসংবিধানিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্ত মোতাবেক খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে ২৩৯ টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে এবং এ অঞ্চলের অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়ে। পরিকল্পনা মতে প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পের জায়গাগুলোতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দখলে নেয়ার হিড়িক পরেছে। প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্পগুলোর স্থলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের ইন্ধনে গড়ে তোলা হয়েছে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় উপাসনালয়, আশ্রমও বিভিন্ন স্থাপনা৷ যেসকল স্থান থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেসকল স্থানগুলোকে সন্ত্রাসীরা এখন নিরাপদ অভয়ারণ্য করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্পের ভূমিতে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং আশ্রম গড়ে উঠেছে। এসব ধর্মীয় স্থানগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। সরকার খাস ভূমি দখলের সবচেয়ে বড় কৌশল ধর্মীয় স্থাপন নির্মাণ। আর এসব ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে সরাসরি ইন্ধন যোগাচ্ছেন, আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। অর্থ যোগান দিচ্ছেন, বিদেশী দাতাসংস্থা, মিশনারী, এনজিও এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পার্বত্য চট্টগ্রামে অটাল ধর্মীয় বরাদ্দ বন্ধ করা উচিত এবং ধর্মীয় বরাদ্দ ব্যয়ের জবাবদিহি এবং যত্রতত্র ধর্মীয় স্থাপন নির্মাণে কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োজন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে সেনাবাহিনীর ভয়ে একসময় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আসতো না সেখানে এখন ভারী অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ২৩৯টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে এবং অরক্ষিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাঙ্গালীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পের স্থলে সেনাক্যাম্প পুন স্থাপন করা হোক। সেসাথে সেসব এলাকাগুলো সন্ত্রাসীদের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে সেসকল এলাকায় জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হোক৷

পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবাদ, হানাহানি, খুনখারাপি বন্ধসহ রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা বন্ধেই সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। সীমান্ত এলাকা ও দুর্গম গহীন অরণ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করণের পাশাপাশি সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করা হবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এই দাবিগুলো করার উদ্দেশ্য হলো- নতুন নতুন সন্ত্রাসী সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ত্রিদেশীয় সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারী অস্ত্র। পাহাড়ে মাদকের ছড়াছড়ি। এখানে চাঁদার জন্য মানুষ খুন হলে তার বিচার হয়না৷ বিচার না হওয়ার অপস্কৃতি সন্ত্রাসীদের আরো বেপরোয়া করেছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) যেভাবেই বাঙ্গালী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর আক্রমণ করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে আসছে সেভাবেই জেএসএস ও ইউপিডিএফ’ও আক্রমণ করার সম্ভাবনা উঠিয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের স্থায়ী পার্বত্য নীতি নেই। সরকার উদাসীন এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীল। এ দূর্বলতার সুযোগ নিয়েছে উপজাতীয়দের একটি বিশ্বাসঘাতক অংশ। তাই এসকল দেশদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনকে আর সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। রাষ্ট্রের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং একটি স্থায়ী পার্বত্য নীতিই প্রয়োজন বলে দীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই দাবি করছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More