পারিবারিক আদালত আইন প্রসঙ্গ: পার্বত্য বাঙ্গালীরা আর কত বঞ্চিত হবে?

0

জাতীয় সংসদে উত্থাপনীয় Family Courts Ordinance, 1985 রহিতপূর্বক সময়োপযোগী করিয়া উহা পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে আনীত বিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলিম বাঙ্গালীদের আইনী অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ উত্থাপনীয় পারিবারিক আদালত আইন-২০২৩- এর ধারা ১ এর উপ ধারা ২ এ ধারা-১(২)- ইহা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা ব্যতিত সমগ্র বাংলাদেশ প্রয়োগ হইবে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের অধিকার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে আনীত বিল জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলিম বাঙ্গালীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এবং আইনটি সংশোধন করে তিন পার্বত্য জেলায় প্রয়োগ করার দাবি জানায়।

এই আইন পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রয়োগ না হওয়ার কারণে অত্রাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১০ লক্ষ বাঙ্গালী পারিবারিক আদালতের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ ও ৩১-এর পরিপন্থী। দেশের মানুষ দেনমোহর ও ভরণপোষণ, বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার ও সন্তানদের অভিভাবক পরিচয়ের জন্য পারিবারিক আদালতের দারস্থ হয় কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলিম বাঙ্গালীরা পারিবারিক আদালতের দারস্থ হওয়ার সুযোগ আর থাকল না এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে। আইন মন্ত্রণালয়ের এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং সংবিধান বিরোধী কার্যক্রম পার্বত্য বাঙ্গালীদের অধিকার লঙ্ঘন করে। বিষয়টি অতি দুঃখজনক এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের খাটো করে দেখার সামিলও বটে।

উপজাতি জনগোষ্ঠীর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি (হিল রেগুলেশন ১৯০০)-এর ৮(৪) ধারার বিধান মতে পারিবারিক বিরোধ নিস্পতির জন্য সংশ্লিষ্ট হেডম্যান, সার্কেল চীপ (তথাকথিত রাজা) -এর বিচার নিষ্পত্তি করার জন্য প্রথাগত আদালত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের অধিকার বিষয়টি সর্বদিকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়েছে। উপজাতিদের পারিবারিক বিরোধ প্রথাগত আইনে নিষ্পত্তি হয় বলে কী পারিবারিক আদালত আইন পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রয়োগ হবে না? এটা কী কোন সাংবিধানিক বাধা? উপরোক্ত পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ১(২) ধারা সংশোধন করে ” তিনজেলা ব্যতিত” শব্দের পরিবর্তে “জেলার উপজাতি ব্যতিত” শব্দসমূহ সংশোধন করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত প্রায় ১০ লক্ষ বাঙ্গালী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো না।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর টুঁটি চেপে ধরার নীলনকশা বলা যায় উক্ত পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে আনীত বিল। যে কোন আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে পার্বত্য বাঙ্গালীদের অবজ্ঞা করার একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে। সেই সংস্কৃতি চালুর অংশ হিসেবে পারিবারিক আদালত আইন পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতিত প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More