মিজোরামের ভোট, বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম-ড. মাহফুজ পারভেজ।

0

বাংলাদেশ, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রাম লাগোয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ঘটেছে ক্ষমতার পালাবদল। পুরনো ও সশস্ত্র-অভিজ্ঞতার ভেতর থেকে আসা নেতাদের স্থলে নির্বাচিত হয়েছেন নতুন ও উন্নয়নমুখী নেতৃত্ব। এই নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত ও বিচ্ছিন্নতার সম্পর্ক নেই। তারা জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে মিজোরামের ভাগ্য বদলের পক্ষে। মিজোরামের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে পাশের পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। যার প্রতিফলন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।

মিজোরামের নির্বাচনে জয়ী জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) ৩৭.৯% ভোট পেয়েছে। ক্ষমতায় থাকা মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ৩৫.১% ভোট পেয়ে মসনদ থেকে ছিটকে পড়েছে। পুরনো দল কংগ্রেস ২০% ভোট পেয়েছে এবং দেশে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পেয়েছে ৫.১% ভোট।

আপাতদৃষ্টিতে যদি মিজোরামে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ভোট শেয়ারের উপর নজর দেওয়া যায়, তাহলে স্পষ্ট হবে যে জেডপিএম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। রাজ্যের মোট ৪০টি আসনের মধ্যে তারা ২৭টি আসন পেয়েছে। ভোট ভাগাভাগি ও জাতিগত মেরুকরণের কারণেই এমন ফলাফল হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। এই ফল মিজোরামের রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তনশীল ধারার ব্যাপারে একটা প্রাথমিক ধারণা প্রদান করে। একই সাথে, এই রাজ্যটির ক্ষমতা যে মূলত এমএনএফ এবং কংগ্রেসের হাতেই ঘোরাফেরা করেছে এতদিন ধরে, তার অবসানের চিত্রটিও তুলে ধরে।

অবাক করা বিষয় হলো, এবারের নির্বাচনে জয়ী আঞ্চলিক দলটি ক্ষমতাচর্চার ৩৬ বছরের প্রতিষ্ঠিত ট্রেন্ড ভেঙে দিয়েছে। এমএনএফ-কে পরাজিত করাও সহজ ছিল না। তার কারণ নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়া মণিপুরের কুকি-চীন উপজাতি এবং প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের চীন সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে সংহতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে জনজাতিগত জাতীয়তাবাদে সুড়সুড়ি দিয়েছিল জোরামথাঙ্গার নেতৃত্বাধীন দল। কংগ্রেস মূলত প্রচার চালিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভোটারদের মন জয় করতে। চেষ্টা করেছে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যটিতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচার করা বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের আটকাতে। আর আঞ্চলিক দল এমএনএফ’কে নিয়ে বিজেপি যথারীতি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করেছে।
এহেন জটিল রাজনৈতিক আবহে ভারতের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন জনসংখ্যা সম্বলিত মিজোরাম রাজ্যের ৮.৬ লক্ষ ভোটার নির্বাচনে অংশ নেন। যাদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটার জাতিগত জাতীয়তাবাদ বা সম্প্রদায় ভিত্তিক রাজনীতির অংশীদার। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-মুক্ত সরকার এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি রাজ্যের যুব ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে, যার ফলেই মিজোরামে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিজোরামে পরিবর্তনের হাওয়াকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে জেডপিএম। তারা মিজোরামের নাগরিক সমাজের অনেক সদস্যকে দলের সমর্থনে শামিল করতে সক্ষম হয়েছে, এমনকি অনেককে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। এই বিষয়টি প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং রাজ্যের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমার নেতৃত্বাধীন দলকে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখে এবং জেডপিএম নিজেদের সংখ্যার জোরেই ক্ষমতায় আসে। মূলত, জেডপিএম-কে একটি স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র সরকার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ভারসাম্য তৈরি করতে সমর্থ হওয়ার কারণেও নির্বাচনী বিজয় অর্জন করেছে।

উত্তরপূর্ব ভারতের ছোট রাজ্যগুলোর রিসোর্স সংগ্রহের উপায়গুলো খুবই সীমিত এবং তারা নিজেদের আর্থিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল। উদাহরণ হিসাবে, ভারতে সর্বাধিক রেভেনিউ রিসিট রেশিও রয়েছে মিজোরামে, যার পরিমাণ ৮৫.৭%। ফলে জেডপিএম’কে ক্ষমতায় বসেই কৃষির বাইরে, পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের মতো এরিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিকে বহুমুখী করে তোলার উপর নজর দিতে হবে। যদি রাজ্যের জনসংখ্যার উচ্চ স্বাক্ষরতা, জনদক্ষতা এবং শিক্ষাকে প্রয়োগ করে মূল্য-যুক্ত পরিষেবাকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে দলটি রাজ্যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ঠিক পাশেই অবস্থিত মিজোরাম উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। আইজল মিজোরামের রাজধানী। মি (জাতি), জো (পাহাড়) এবং রাম (ভূমি), এই তিনটি শব্দ থেকে উদ্ভূত মিজোরাম বলতে “পাহাড়ি জাতির ভূমি” বোঝায়। ভারতের উত্তর-পূর্বে, এটি সর্বদক্ষিণের স্থলবেষ্টিত রাজ্য এবং ভারতের সপ্তভগিনী রাজ্যসমূহের ত্রিপুরা, আসাম, মণিপুর এই তিনটি রাজ্যের সাথে যার সীমানা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের প্রায় ৭২২ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে মিজোরামের সীমানা অবস্থিত।

ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে মিজোরাম আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭২ সালে আসাম পুনর্গঠনে মিজোরাম কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে এটি ভারতে একটি ‘পূর্ণ রাজ্যের’ মর্যাদা পায়। রাজ্য মর্যাদার পর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২২ বছর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এই রাজ্যের ক্ষমতায় থাকে। লাল থানহাওলা এখানকার অন্যতম নেতা।

মিজোরাম মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে কিছু সামরিক পরিকাঠামো রয়েছে যা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অংশ। খ্রিস্টান অধ্যুষিত ভৈরেংতে তে সামরিক প্রশিক্ষণ হয়। সম্প্রতি ভারত -জাপান এখানে যৌথ মহড়া করে।

আদমশুমারী অনুসারে মিজোরামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৮৭%) মিজো খৃস্টান ধর্মালম্বী যারা প্রধানত প্রেসবিটারিয়ান। বাকি জনসংখ্যার ৮.৩% বৌদ্ধ, ৩.৬% হিন্দু ধর্মালম্বী। কয়েক হাজার মানুষ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নৃতাত্ত্বিক মিজো, যারা ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১.১% মুসলিম। মিজোরামে বেশিরভাগ মুসলমান জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা। অবশিষ্ট ৩,০০০ মানুষ শিখ, জৈন এবং অন্যান্য ধর্মালম্বী।

ভারতের বাকি রাজ্যকে পিছনে ফেলে হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি প্রসারে শীর্ষে উঠে এসেছে মিজোরাম। মিজোরাম স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি (এমএসএসিএস)-এর একটি রিপোর্ট থেকে রাজ্যে রোজ গড়ে ৯ জনের রক্তপরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়ছে। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ প্রবণতা যে রাজ্যগুলেতে সব থেকে বেশি, সেই তালিকায় মিজোরাম শীর্ষ স্থানে রয়েছে (২.৪ শতাংশ)।

সেই মিজোরাম আবার ভারতের সংঘাতপূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর একটি, যেখানে সুপ্ত রয়েছে জাতিগত সশস্ত্র সংঘর্ষ। মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সংঘাতের প্রভাবও মিজোরামে পড়েছে। চীন ও কুকি উপজাতির প্রচুর শরণার্থী মিজোরামে আশ্রয় পেয়েছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র নাশকতায় লিপ্ত কুকি-চীন গোষ্ঠীর সমগোত্রীয় বহু মানুষও সেখানে বসবাস করে। ফলে মিজোরাম রাজ্যের ঘটনাবলি আশেপাশের অঞ্চলের জন্যেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্বের দিক থেকে মিজোরাম আরেকটি কারণে সবার নজরে। আর তা হলো, রাজ্যের ভূকৌশলগত অবস্থান। মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত ছাড়াও উত্তরে চীন আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় ইন্দোপ্যাসিফিক বলয়ের প্রান্তীয় জনপদের তাৎপর্য রাখে। পাহাড়ি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশাল ভূগোলের পক্ষে সমু্দ্রপথে যেতে মিজোরাম গেটওয়ে।

দক্ষিণ এশিয়ায় আশ্চর্যজনক ভাবে একমাত্র খ্রিস্টান প্রধান মিজোরামের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের বাড়তি আগ্রহ ও মনোযোগ রয়েছে। আর এখানেই অদ্ভুতভাবে একদল মানুষ ইহুদি ধর্মগ্রহণ করায় ইসরায়েলের সাথেও মিজোরাম সম্পর্কিত।

মিজোরামের মতো এমন বিচিত্র বিন্যাস ভারতে তো বটেই, সারা দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনও এলাকার নেই। যদিও সেখানে রয়েছে সুপ্ত কিছু সমস্যা, তথাপি দীর্ঘ জাতিগত সংঘাত থেকে উন্নয়নের পথে চলেছে রাজ্যটি। মিজোরামের ভোটের ফলেও দেখা গেছে চমক। সশস্ত্র পথ থেকে যারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে এসে বহু বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল, তারা পরাজিত হয়েছে নতুন এক দলের কাছে, যে দল উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাণ্ডরী। মিজোরমের ভোটের পর পরই পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মিজোরামের অভিজ্ঞতা সারা বাংলাদেশে না হলেও সংলগ্ন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি প্রভাব বিস্তার করবে। বিশেষত, মিজোরামের অভিজ্ঞতায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও সংঘাত-বিরোধী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উন্নয়নমুখী নেতৃত্বের এগিয়ে আসার সম্ভবনা প্রবলতর হয়েছে। যদি বাংলাশের পাহাড়ে নতুন ও উদ্যোগী নেতৃত্ব আসে, তাহলে তারা বাংলাদেশের পাহাড়ে মানবসম্পদ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করতে পারবেন এবং পাশের ভারতীয় পার্বত্য রাজ্যগুরোর সঙ্গে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করে আঞ্চলিক নবজাগরণের সূচনা ঘটাতে পারবেন।

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তির পর থেকেই যাবতীয় স্তরের নেতৃত্ব রয়েছে সশস্ত্র রাজনীতি থেকে উত্থিত নেতাদের হাতে। তারা চুক্তির পর দীর্ঘ ২৬ বছর রে শান্তির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সন্ত্রাস থেকে শান্তিতে রূপান্তরে এবং ধ্বংস থেকে উন্নয়নে অভিমুখে যত্রাপথে তাদের অবদান অসামান্য। কিন্তু বয়সের কারণে এই নেতৃত্ব এখন শেষজীবনে উপনীত। অনেকেই মারাও গেছেন। আবার অনেকে প্রাচীন চিন্তা ধরে আছেন। এমতাবস্থায় শান্তিচুক্তি-পরবর্তী ২৬ বছরে যে শিক্ষিত, দক্ষ ও বাস্তবতার বোধ সম্পন্ন তরুণ-যুবক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, তাদের দায়িত্ব রয়েছে নেতৃত্বের জায়গায় এসে পাহাড়ের মাটি ও মানুষের মধ্যে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ধারা শান্তি, সম্প্রতি ও উন্নয়নের রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়া। তাদেরকে পাহাড়ের আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির মধ্যে সেতুবন্ধের মতো কাজ করতে হবে। জাতীয় থেকে স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বের শূন্যতাকে পূর্ণ করতে হবে তাদের মাধ্যমেই। আর বর্তমানে দেশের মোট ভোটারের সিংহভাগই নতুন ও তরুণ প্রজন্মের। ফলের এদের প্রত্যাশা ও চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে তরুণদের মধ্য থেকে উঠে আসা তরুণ-যুবক নেতৃত্ব।

দ্বাদশ জাতীয় সংস নির্বােচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও জনপ্রিয় প্রার্থীদেরও এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেখা যাক, পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন ও সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্ম এই সুযোগকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারে।

লেখক: ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More