পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলোর চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে।

0

বিগত বছরগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো ৭০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এমন তথ্য প্রকাশিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এই চাঁদাবাজির অর্থের পরিমাণ আরো বেশি। এক সমীকরণে দেখা গেছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রসিত গ্রুপ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রপ, সংস্কার এমএন লারমা গ্রুপ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বর্মা গ্রুপ, মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)সহ মোট ৬টি গ্রুপ বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা সমপরিমাণ চাঁদাবাজি করে। চাঁদাবাজির এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে ভারী অস্ত্র ক্রয় করা হয়, নিজেদের বেতন-ভাতা সহ সাংগঠনিক রক্ষার কাজেও ব্যয় হয়।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজির প্রধান উৎস-
১. অবৈধ কাঠ ক্রয়-বিক্রয় প্রতি গণফুট ১০০ টাকা হারে
২. সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বরাদ্দের ১০%
৩. ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের ৫% থেকে
৪. স্কুল, কলেজ নির্মাণ ৫% থেকে ১০%
৫. মাছধরার নৌকা-জাল বাৎসরিক ২,০০০ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত
৬. মৌসুমের ফলমূল বিভিন্ন হারে
৭. আদা-হলুদ মন প্রতি
৮. গবাদি পশু হাজারে ৬০ টাকা
৯. সরকারি চাকরিজীবি বাৎসরিক হারে ৬,০০০ টাকা থেকে শুরু
১০. পরিবার প্রতিগণ চাঁদা মাসিক ও বাৎসরিক হারে পরিবার প্রতি ৫০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত।
১১. জমি ক্রয়-বিক্রয় কানি প্রতি ২,০০০ থেকে শুরু
১২. বাগান ক্রয়-বিক্রয় ১০% হারে
১৩. বাঁশ শতে ২০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত
১৪. চাষাবাদ কানি প্রতি ১,০০০ থেকে শুরু

এই প্রধান উৎসগুলো হতে চাঁদা অবধারিত। এছাড়াও মানুষের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় এমন কোন জিনিস বাকি নেই যেখান থেকে চাঁদা দিতে হয়না! পার্বত্য চট্টগ্রাম একটা চাঁদাবাজির আখড়া। এখানে চাঁদাবাজদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও এরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়। প্রকাশ্যে গোপনে চলা এই চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব লক্ষনীয়। প্রশাসন যদি চাঁদাবাজি বন্ধে একটু আন্তরিকতা দেখায় অন্ততপক্ষে বেপরোয়া চাঁদাবাজি কমে আসবে। পাহাড়ে এই চাঁদাবাজরা সকলেই চিহ্নিত। পাহাড়ের প্রতিটি বাঁকে বাঁকেই চলে এ চাঁদাবাজি। দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ না করলে বা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট করা হয়; নানানভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়; অপহরণ পূর্বক হত্যা করা হয়।

এখানে শেষ নয় সাধারণ পাহাড়ি-বাঙ্গালী থেকে উত্তোলিত চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী দলগুলো খুনাখুনি এবং রক্তারক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অশান্ত হয় সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম। পরিতাপের বিষয় তার দায়ভার পড়ে বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীর উপর। সন্ত্রাসীদের এই বিশৃঙ্খলা, অন্যায়- অবিচার ও অস্ত্রবাজি কখনো বাংলাদেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে আসেনা। এখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নিরাপত্তা ভয়ে প্রকৃত সত্য চেপে যেতে যায়। তাদের সাথে সামিল হয় প্রথম সারির গণমাধ্যমও। এর ফলে পাহাড়ের চরম বাস্তবতা মাটি চাপা পড়ে যাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ থেকে সন্ত্রাসীরা যে বিশাল পরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি করে তা দিয়ে সন্ত্রাসীদের জনবলের বেতন-ভাতা, অবৈধ অস্ত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণ এবং বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনী বিরোধী প্রচারণা চলে ও রাষ্ট্র ভাগ করার ষড়যন্ত্রের জন্য কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। একটি সংগঠনের সাংগঠনিক ভিত্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। পাহাড়ের সন্ত্রাসীদলগুলো সাংগঠনিক চালিকাশক্তি হিসেবে অর্থ খুব সহজেই পাচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি খুবি মজবুত। এই অর্থের উৎসকে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তারা হালকাভাবে নেয়। একপ্রকার বলতে গেলে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনকে উদাসীন ভূমিকায় দেখা যায়। এই উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা একসময় রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিসাধনের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

পরিশেষে বলতে চায় প্রশাসন যদি একটু আন্তরিত হয় পাহাড়ের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধ করা সম্ভব এবং সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষা করা সম্ভব৷

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More